ইতিহাস যখন নেমে আসে অন্ধকারের মুখোশ পরে

সময়ের পাঁজরে যুলুমের অঙ্কুর
লিটন হোসাইন জিহাদ
যেখানে আলোর দ্যুতি থেমে যায়,
সেখানে জন্ম নেয় ক্ষমতার অন্ধ ব্যাধি।
আরবের মরুদ্যানে,
যেখানে মদিনা ছিল নৈতিকতার চূড়া,
সেখানেই উঁকি দিল এক নতুন সময় —
যার নাম ইতিহাস রেখেছে: ইয়াজিদ।
সে ছিল না নামাজের গাম্ভীর্যে পবিত্র,
সে ছিল না কোরআনের আয়াতের প্রেমিক।
তার মসনদ ছিল মদ আর নাচের উৎসব,
তার প্রাসাদে গর্জে উঠত ন্যায়ের নীরবতা।
যিনি নিজেকে বলত ‘আমিরুল মু’মিনীন’,
কিন্তু যার হৃদয়ে ছিল না
নবীর দয়ার কোনো ছায়া।
সে চেয়েছিল সকল কণ্ঠ নিস্তব্ধ হোক,
আর সিজদাহর জায়গায় জাহিলিয়াত নৃত্য করুক।
এক এক করে বন্ধ হতে লাগলো মিম্বরের কণ্ঠ,
ইসলাম নামক রৌদ্র ছায়া হারাতে লাগল
তার আলো-ভরা সুর।
রাসূলের নবুয়তকে সে বানাতে চাইল
উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ক্ষমতার সিঁড়ি।
তখনই…
একটি ঘরে আলো জ্বলে ওঠে —
নীরবে উঠে দাঁড়ায় এক প্রজ্ঞাবান পুরুষ,
আলীর রক্তধারা যার শিরায়,
আর হৃদয়ে নবীর স্মৃতি।
ইমাম হোসাইন (রাঃ) বললেন:
“আমি বাইআত দিব না এক জালেমের হাতে।
ইসলাম এক চিঠি নয়, যা ক্ষমতার মোহরে লেখা যায়।
ইসলাম হল রক্তের কসম,
যে কসম মক্কার গুহায় নবী (সাঃ) একা নিয়েছিলেন।”
চিঠির পাতায় জ্বলে উঠলো নফল নামাজ,
কুফার মানুষ লিখল আহ্বান —
“এসো, হোসাইন! তোমার অপেক্ষায় আছে এক জাতি,
যারা জানে, সত্যের রং রক্তিম।
আমরা তোমার সৈনিক,
তুমি যদি আসো, কারবালা হবে কা’বার এক প্রান্ত।”
হোসাইন জানতেন —
এ পথে তৃষ্ণা থাকবে, থাকবে ছুরি, থাকবে মৃত্যু,
তবুও চললেন তিনি —
কারণ তিনি ছিলেন সেই প্রেমিক,
যিনি জানতেন, প্রেম মানে কেবল হাসি নয়,
প্রেম মানে সত্যের জন্য আত্মত্যাগ।
আশুরার আগমন এভাবে নয়,
জ্যোতির এক বিন্দু হয়ে
ইতিহাস নিজেই ছুটে চলে কারবালার দিকে।
সময় বুঝতে পারে না,
একটি কাফেলার পদধ্বনির মাঝে জন্ম নিচ্ছে চিরন্তন বিপ্লব।
তারা ছিলেন কেবল বাহাত্তর জন,
কিন্তু ঈমানের চূড়ান্ত রূপ।
যারা সন্তানকে পাঠালেন যুদ্ধের আগে —
যেন বললেন, “আমার রক্ত নয়,
প্রথমে তোমার ঈমান প্রমাণ কর।”
যুলুম যখন গঠিত হয় মসজিদের ছায়ায়,
তখন এক হোসাইন দাঁড়িয়ে যান একা —
সমস্ত মিথ্যার বিরুদ্ধে,
কারণ সত্যের সৈনিক সংখ্যা দেখে যুদ্ধ করেন না,
তারা দেখে কে সত্য, আর কে আল্লাহর জন্য প্রস্তুত।
Responses