কেঁদেও মেলেনি অ্যাম্বুল্যান্স, সদ্যোজাতের দেহ থলিতে মুড়ে নিয়ে এলেন বাড়িতে

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: সখারাম এবং তাঁর ২৬ বছরের স্ত্রী অভিতা দুই সন্তান নিয়ে থানে জেলার বাদলাপুরে একটি ইটভাটায় কাজ করতেন। তৃতীয় সন্তানের অভিভাবক হতে চলেছিলেন তাঁরা। সন্তানের জন্মের সময় ঘনিয়ে এলে, নিরাপদ প্রসবের আশায় তারা তিন সপ্তাহ আগে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। কিন্তু ১১ জুন আচমকাই অভিতার প্রসব বেদনা শুরু হয়। সেখান থেকে শুরু হয় তাঁদের দুর্ভোগ। সখারাম বলেন, ‘সেদিন সকাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছি, কিন্তু কেউ আসেনি।’ তিনি জানান, গ্রামের আশা (ASHA) কর্মীও প্রথমে পাওয়া যায়নি। পরে তিনি জরুরি নম্বর ১০৮-এ ফোন করেছিলেন, কিন্তু প্রথমে কোনও উত্তর পাননি বলে জানা যায়। এরপর তিনি এক প্রাইভেট গাড়ির ব্যবস্থা করে স্ত্রীকে খোদালা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁদের এক ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করানো হয়।

সখারাম আরও জানান, পরে তাঁদের মোখাদা গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্ত্রী অতিভা বলেন, ‘ওরা আমাকে একা একটা ঘরে আলাদা করে রাখে। আমার স্বামী এর প্রতিবাদ করলে, তারা পুলিস ডাকে—পুলিস এসে ওকে মারধর করে।’ মোখাদার চিকিত্‍সকেরা বাচ্চার হৃদস্পন্দন ধরতে না পারায় নাসিক সিভিল হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু তখন অ্যাম্বুলেন্স না থাকায়, ২৫ কিমি দূরের আসে গ্রাম থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনা হয়।

অভিতা নাসিকের হাসপাতালে পৌঁছান সন্ধ্যের সময়। ১২ জুন রাত ১.৩০-এ তিনি মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। দুঃখের পাহাড় এখানেই শেষ নয়। পরেরদিন সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুর মৃতদেহ সখারামের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু মৃতদেহ নিয়ে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য কোনও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেয়নি।

সখারাম বলেন, ‘আমি এস.টি. স্ট্যান্ডে গিয়ে ২০ টাকায় একটা ক্যারি ব্যাগ কিনি, কাপড়ে আমার মেয়েকে জড়িয়ে রাখি, তারপর এমএসআরটিসি বাসে প্রায় ৯০ কিমি পেরিয়ে বাড়ি নিয়ে আসি।’ সেদিনই মৃত মেয়েকে পুঁতে শেষকৃত্য পূরণ করা হয়।

১৩ জুন সখারাম আবার নাসিকে গিয়ে স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে আসেন। স্ত্রীর শারিরীকভাবে দুর্বল থাকায় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসার কথা ভাবেন। কিন্তু সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স দিতে অস্বীকার করে। বাধ্য হয়ে অভিতাকে নিয়ে বাসেই বাড়ি ফিরতে হয় সখারামকে।

 

অন্যদিকে, মোখাদা গ্রামীণ হাসপাতালের ডাক্তার ভাউসাহেব চাতার দাবি করেন, বাচ্চাটি গর্ভেই মারা যান। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স খারাপ থাকায় দেওয়া যায়নি। গ্রাম থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। চিকিত্‍সক আরও দাবি করেন যে, হাসপাতাল ফেরার সময় অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সখারাম নাকি তা নিতে অস্বীকার করে একটি মুচলেকা দেন—যা সখারাম অস্বীকার করেছেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে আদিবাসী দম্পতিকে সবরকম সহযোগিতা করা হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

Related Articles

নিসর্গে তুমি : লিটন হোসাইন জিহাদ

রাত্রির অন্ধকার কাটিয়ে ভোরের আলো ধীরে ধীরে গ্রামটাকে জাগিয়ে তুলছিল। চারপাশে একরাশ কুয়াশা, যেন প্রকৃতি নিজের শরীর জড়িয়ে রেখেছে শুভ্র চাদরে। বটগাছের পাতায় শিশিরের ঝিকিমিকি,…

স্ত্রীকে হত্যার ৩ দিন পর স্বামী গ্রেফতার

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রৌফাবাদ এলাকায় স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ১১ টুকরো করে গুম করার ঘটনায় ঘাতক স্বামী সুমনকে (৩৫) গ্রেফতার  করেছে র‌্যাব।…

ব্যর্থতা থেকে সফলতার পথে: জীবনের অন্ধকার গলি পেরিয়ে আলোর খোঁজে

অনলাইন ডেস্ক:  জীবনের পথে চলতে গিয়ে আমরা সকলেই কমবেশি ব্যর্থতার সম্মুখীন হই। কেউ চাকরি হারায়, কেউ ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়, কেউ আবার স্বপ্ন পূরণের মাঝপথে হাল…

লিটন হোসাইন জিহাদের এক গুচ্ছ কবিতা যেন আগুন

ফ্রিজে আটকে যাওয়া মা রাত আড়াইটায় ফ্রিজ খুললে মা বসে থাকে তাতে, চোখে টিফিন বক্সের মতো শীতল সংযম, হাত দিয়ে পাঁউরুটির পাশে ঠেলে দেয় বাবার…

বারিল: সর্বকালের দ্রুততম ক্যাটাগরি ৫ হারিকেন

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: ২০২৫ সালের জুন মাস। আটলান্টিক মহাসাগর যেন অস্বাভাবিক নীরব। সাধারণত এ সময়ে একটি-দুটি নামকরণকৃত হারিকেন তৈরি হয়, কিন্তু এবার জুনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত…

Responses