মাছিয়াতা দরবার শরীফে আউলাদে রাসুল (সা.)-এর গৌরবময় ১০২তম পবিত্র ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুণ্যভূমি মাছিয়াতা দরবার শরীফে অত্যন্ত আধ্যাত্মিক পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে, আউলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উজ্জ্বল নক্ষত্র, গ্যালাক্সি ছাইয়্যেদুল আউলিয়া হযরত মাওলানা শাহ্ ছৈয়দ ইয়াকুব আলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর ১০২তম পবিত্র ওরশ শরীফ।
২২ মে ২০২৫ খ্রিঃ বৃহস্পতিবার থেকে এই পবিত্র ওরশ শরীফ শুরু হয় এবং শুক্রবার ৯ই জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত আধ্যাত্মিকতা ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় মাজার শরীফে পবিত্র কুরআন শরীফ খতমের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বাদ আসর অনুষ্ঠিত হয় মিলাদ শরীফ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল, যেখানে হাজারো আশেক-ভক্তের দরুদ-সালামের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে দরবার প্রাঙ্গণ।
বাদ মাগরিব অনুষ্ঠিত হয় জিকির-আজকার এবং বাদ এশা ওয়াজ ও নছিয়তের মাহফিল, যেখানে দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম হৃদয়ছোঁয়া আলোচনার মাধ্যমে আলোর বার্তা ছড়িয়ে দেন উপস্থিত মুসল্লিদের মাঝে।
পরদিন শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকে চলে বিশেষ জিকির ও তালিমের আসর। সবশেষে আখেরী মোনাজাতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও হেদায়েত কামনা করা হয় এবং তাবারুক বিতরণের মাধ্যমে ওরশের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে।
এই মহতী আয়োজনে অংশ নিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো আশেক-ভক্ত মাছিয়াতা দরবারে ছুটে আসেন। মাছিয়াতা দরবার শরীফ পরিণত হয় এক অনন্য মিলনমেলায়। পুরো দরবার এলাকা পরিণত হয় আধ্যাত্মিক এক নূরের বাগানে, যেখানে মিশে থাকে ভালোবাসা, ভক্তি ও শান্তির সুবাতাস।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাছিয়াতা দরবার শরীফের ইতিহাস প্রায় তিন শতাধিক বছরের। এটি আউলাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৌরবময় শাজরার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যার উজ্জ্বল নেতৃত্বে ছিলেন সিপাহসালার ছৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহঃ)।
এই দরবারের মহান অলিদের মধ্যে রয়েছেন ছাইয়্যেদুল উলামা আলা হযরত মাওলানা শাহ ছৈয়দ কুতুবুর রহমান (রহঃ) ও ছাইয়্যেদুল আছফিয়া আ’লা হযরত মাওলানা শাহ ছৈয়্যদ আবু ছালেহ (রঃ)। তাঁদের নাতি, বর্তমান সময়ের প্রখ্যাত মোহাদ্দিস ও আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ, আল্লামা শাহ্ সূফী ছৈয়্যদ জাফরুল কুদ্দুছ গালেব সাহেব এই পবিত্র ওরশ শরীফে দরবারের আশেকানদের সঙ্গে সরাসরি সময় দিয়ে তাঁদের অন্তরের খোরাক জুগিয়েছেন।
মাছিয়াতা দরবার শরীফের এই ওরশ শরীফ কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি ছিল আধ্যাত্মিক উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধের চর্চা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রকাশের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এই ঐতিহাসিক ওরশের মাহাত্ম্য শুধু সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা চিরকাল ভক্ত-আশেকদের হৃদয়ে অম্লান হয়ে থাকবে।

Responses