Spread the love

মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, সিলেটঃ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রীজ দীর্ঘ ৪৫ বছর পর সংস্কার হচ্ছে।  বরাদ্দের দুই বছর পর আলোর মুখ দেখছে ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রীজ সংস্কার প্রকল্প। আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংস্কার কাজে নিয়োজিত রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ।

ইতোমধ্যে সংস্কারের যাবতীয় উপকরণ সিলেটে আসতে শুরু করেছে। ফলে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর সংস্কার হচ্ছে বৃটিশ আমলে নির্মিত সিলেটের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক স্তম্ভ ক্বীন ব্রিজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এই সেতুর সংস্কার কাজ করছে রেলওয়ে বিভাগ। ক্বীনব্রীজটির মূল কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। 

৩ দপ্তরে কাজ ভাগাভাগি হওয়ায় কিন ব্রিজ সংস্কার নিয়ে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ পুরনো। ৩ কর্তৃপক্ষের দায়সারা আচরণে ঝুঁকির মুখে পড়ে ব্রীজটি। শেষ পর্যন্ত সওজের দেয়া বরাদ্দে সংস্কার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ। ১ মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রীজ সংস্কারের জন্য ২ বছরের বেশি সময় আগে ২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগের গাফিলতির কারণে কাজ শুরু করতে এতদিন বিলম্ব হয়। গেল মাসে সংস্কার কাজের জন্য প্রকৌশলী নিয়োগ দেয় রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। যদিও রেলওয়ের সেতু বিভাগ বলছে, টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর দাপ্তরিক কাজ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১ বছরেরও অধিক সময় লেগেছে ।

জানা গেছে, ২০২০ সালে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় জরাজীর্ণ কিন ব্রীজ সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরেরই জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে ২ বছরেও শুরু হয়নি সংস্কার কাজ।

সওজের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কিন ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ বেশি পারদর্শী। তাই কিনব্রিজ সংস্কার ও কিছু মেরামত কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে সওজের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুষ্ক মৌসুমের সেতুর সংস্কারকাজ করা উচিত ছিল। কারণ সামনে বর্ষাকাল কিছুদিন পর নদীর পানি বেড়ে গেলে সংস্কারকাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে লোহার কাঠামোর দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি নির্মাণ করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।

তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘কিনব্রিজ’। প্রায় ৯ দশক ধরে সচল সেতুটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম দফা সংস্কার করেছিল। এরপর আর বড় ধরনের সংস্কার হয়নি।

এ ব্যাপারে রেলওয়ের সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জিসান দত্ত রাতে জানান, আমি গত ১৫ দিন আগে সিলেটে যোগ দিয়েছি। ফলে দেরীতে কাজ শুরু হওয়ার সঠিক কারণ বলতে পারছিনা। ইতোমধ্যে কিন ব্রীজ সংস্কারের জন্য যাবতীয় মালামাল সিলেটে আসতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহেই কাজ শুরু হবে।

সামনে বর্ষার মওসুম এই সময়ে কাজে প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে তিনি বলেন, বর্ষায় সংস্কার কাজে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমরা কাজ শুরুর পর এক মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করবো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরীর মাঝামাঝি এলাকার এই সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে এটি দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে সিটি কর্পোরেশন। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে ৫২ দিন পর যান চলাচলের জন্য ফের সেতুটি খুলে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তৎকালীন সময়ে কিন ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ বেশি পারদর্শী। তাই কিন ব্রীজ সংস্কার ও কিছু মেরামত কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ব্রীজের নির্মাণ ও পূর্ববর্তী সংস্কারকাজ রেলওয়ে বিভাগ করছে। সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হওয়া টাকা ২০২১ সালের জুনেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন ব্রিজ সংস্কারে প্রকৌশলও নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে বিভাগ। আমরাও তাদেরকে কাজ শুরুর জন্য চাপ দিয়ে আসছি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, কিন ব্রীজের দায়িত্ব মূলত সড়ত ও জনপথ বিভাগের। ঝুঁকি এড়াতে ও নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে সিসিক যান চলাচল সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিছুদিন যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু জনতার দাবীর মূখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পর সিসিক শুধু বাতি জ্বালানোর বিষয়টি দেখাশুনা করছে। সংস্কার কাজটি একান্তই সওজ বিভাগের।