লিটন হোসাইন জিহাদ: বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি হলো মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য কোটার ব্যবস্থা বন্ধ করা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটার সংস্কার করা। তাদের দাবি, কোটার পদ্ধতিতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
একজন রিকশাওয়ালার মন্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে: “চাকুরীজীবী, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান এবং নাতী সহ বিখ্যাত মানুষের কোটার পদ্ধতিতে চাকরি হলে আমাদের সন্তানরা কী করবে?” এই বক্তব্য সাধারণ মানুষের মনোভাবকে প্রতিফলিত করে। কোটার পদ্ধতিতে সমাজের একটি অংশ উপকৃত হলেও, এটি অন্যদের জন্য বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কেন কোটার পদ্ধতি বাদ দেওয়া দরকার
১. মেধার মূল্যায়ন: কোটার পদ্ধতি মেধাবীদের যথাযথ মূল্যায়নকে বাধাগ্রস্ত করে। যখন মেধার চেয়ে কোটার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হয়, তখন প্রকৃত মেধাবীরা উপযুক্ত মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়।
২. সমতার প্রতিফলন: কোটার পদ্ধতি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে সমতা আনার পরিবর্তে বৈষম্য সৃষ্টি করে। সবাই যদি সমান সুযোগ পায়, তবে সমাজে একটি ন্যায়বিচার ও সমতার পরিবেশ তৈরি হবে।
৩. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: মেধাভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। মেধাবী কর্মীরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন।
৪. আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা: বর্তমান বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার যুগে, কোটার পদ্ধতি দেশের প্রতিযোগিতা ক্ষমতাকে হ্রাস করতে পারে। মেধাভিত্তিক নিয়োগ আন্তর্জাতিক মানের সাথে প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কোটার পদ্ধতি বাতিলের ফলাফল
১. মেধার বিকাশ: কোটার পদ্ধতি বাদ দিলে মেধাবীদের বিকাশের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। এটি শিক্ষা ব্যবস্থায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, কারণ শিক্ষার্থীরা আরও বেশি পরিশ্রম করবে।
2. বৈষম্য হ্রাস: যখন সবাই সমান সুযোগ পাবে, তখন সমাজে বৈষম্যের মাত্রা হ্রাস পাবে। এর ফলে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
3. জাতীয় উন্নয়ন: মেধার ভিত্তিতে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। এর ফলে অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন সম্ভব হবে।
কোটার পদ্ধতি সমাজের একটি অংশের জন্য সুবিধা হলেও এটি সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নের জন্য প্রতিকূল। মেধার মূল্যায়ন ও সমান সুযোগের ভিত্তিতে একটি ন্যায়বিচারমূলক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। এই প্রক্রিয়া আমাদের সন্তানদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। তাই, কোটার পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন ও সংস্কার করা জরুরি।