সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের জন্য বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাতে ছাতা নিয়ে স্লোগান দিয়ে জড়ো হচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল ৩টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
‘কোটা নয় মেধা, মেধা মেধা’, ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, ‘মামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’; পুলিশ দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ -ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে তাড়াহুড়ো করতে দেখা যায় নগরবাসীর মধ্যে। রাজধানীর সড়কগুলোতে দেখা যায় বাড়তি যানবাহনের চাপ। রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোড, বিশ্বরোড, বাড্ডা, রামপুরা, গুলশানে দেখা গেছে এই চিত্র।
বুধবার (১০ জুলাই) সারাদিন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে শিক্ষার্থীদের দিনব্যাপী ব্লকেডে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরো ঢাকা। দিনভর এই অবরোধে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষ। যানবাহনের অভাবে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে দুর্ভোগের শিকার হন তারা।
দিনভর অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে ফের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তখন সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ।
কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত মঙ্গলবার আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী ।
দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
তবে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতারা। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।