লিটন হোসাইন জিহাদ: হতাশা হওয়া মানে হলো আমাদের মনে প্রাণে নিরাশা বা অসন্তোষ থাকা। এটি মনের একটি অবস্থা যা অন্ধকার এবং নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। হতাশা হতের কারণ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন প্রাপ্তবয়স্কতা, কোনো নিষ্ঠুর অবজেক্টিভ বা কোনো ব্যক্তিগত অপমানের অভিজ্ঞতা, বা কোনো ব্যক্তিগত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতা । হতাশা অবস্থার সহজে সম্পর্কিত অনুভূতি হলো নিঃশব্দ এবং অকরুণ মনের অনুভূতি।চলুন একটা সত্য ঘটনা জেনে আসি।
৯০ দশের লন্ডন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর এক সুন্দরী মহিলা শরতের সন্ধ্যায় বসে আছে টেমস নদীর পাড়। হতাশা তাকে এমন ভাবে গ্রাস করেছে আর বাচতে ইচ্ছে হলো না। বিকাল পাচটা নাগাদ সে জলে ঝাপ দিলো। শব্দ শুনে গার্ড সঙ্গে সঙ্গে হুইসেল বাজালো। জলরক্ষীরা এসে অচেতন এই মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। এবারের মতো সে বেঁচে উঠলো।ডাক্তার তাকে জিজ্ঞেস করলো আপনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন কেন?। মহিলা কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু নামটা বলো আমার নাম জোয়ান রাউলিং (Joanne Rowling) আমি বাড়ি যাব।ডাক্তার বুঝলেন উনি অ্যাকিউট ডিপ্রেশনে ভূগছেন। তিনি তাই জোয়ানিকে একজন সাইকিয়াইট্রিস্টের পরামর্শ নিতে বললেন।
নিজের পছন্দে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল পর্তুগিজ টেলিভিশন সাংবাদিক জর্জ আরান্টেসের সাথে। বিবাহ বিচ্ছেদের পর বাবার বাড়িতেও ঠাই হলোনা জোয়ানির। এক সন্তান নিয়ে অসহায়। একদিকে অর্থ কষ্ট । অন্যদিকে থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে পেট চালাবার তাগিদে ক্যাফেতে কাজ নেন। কিন্তু দার দেনা এমন এক অবস্থায় গিয়ে পড়েছিল ক্যাফেতে যা রুজি হতো তা দিয়ে দেনা পরিশোদ করা যাচ্ছিল না। একদিন ম্যাঞ্চেস্টার থেকে লন্ডনে যাবার ট্রেনে চাপলেন। যাত্রাপথে এক বিস্ময় বালককে নিয়ে একটা গল্পের প্লট হঠাৎই মাথায় এলো জোয়ানির। হাতের কাছে কিছু না থাকায় টিস্যু পেপারের ওপরেই লিখে ফেললেন গল্পটি। লন্ডনে পৌঁছে আবার ক্যাফেতে কাজ শুরু করলেন তিনি।গল্প নিয়ে আর ভাবার সুযোগ পেল না। আগে তো বাঁচতে হবে।
একদিন অপরাহ্নের বিরতিতে তার বন্ধু রবার্ট ঐ টিস্যু পেপারগুলি আবিষ্কার করলেন। এবং আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এ লেখা কি তোমার জোয়ানি। নির্বিকার জোয়ানি শুধু ঘাড় নাড়লেন। রবার্ট বললেন, এক্ষুনি তার উচিত কোনো প্রকাশকের সঙ্গে দেখা করা। কি মনে করলেন জানা নেই, তবে সেদিন কাজ সেরে এক প্রকাশকের কাছে তিনি ঐ পেপারগুলি দিয়ে এলেন।
এক সপ্তাহ পর সেই ক্যাফের ম্যানেজারের কাছে জোয়ানির জন্য একটা ফোন এলো। ফোনের ওপারে ছিলেন ব্লুমস্ বিউরি প্রকাশনা সংস্থার প্রধান সম্পাদক বেরি ক্যানিংহাম। উনি জোয়ানিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি ঐ আশ্চর্য বালকের কাহিনীকে আরো বিস্তৃত আকারে লিখতে পারবেন কি ? জোয়ানি বললেন, হ্যাঁ পারব। কিন্তু আমার তো উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে তাহলে। বেরি বললেন, আপনাকে আমরা দৈনিক পারিশ্রমিক দেব। দয়া করে আপনি লিখুন। ক্যাফে ছাড়লেন জোয়ানি। মন দিলেন লেখায়। বাকিটা ইতিহাস। সৃষ্টি হলো জগত বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ সিরিজ।আপনি জানেন কী? বিশ্ব জুড়ে চল্লিশ কোটি বই বিক্রি হলো রাতারাতি।লেখিকা হলেন ৫৬০ কোটি ইউরোর মালকিন।তিনি আর কেউ নন সে হলো টেমস নদীতে আত্মহত্যা করতে যাওয়া জোয়ান রাউলিং । যাকে এখন বিশ্বে জে.কে রাউলিং নামে চিনে।