স্ত্রীকে মা বলে ডাকলে কী হয় তার ব্যাখা দেওয়া হলো

সমাজে স্ত্রী কে মা বলে ডাকা ও স্ত্রীকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করা নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে। মূলত এ বিষয়ে ইসলামের বিধান কী? আজ আলোচনা করবো গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে।

বিবিকে মা বলে ডাকলে কোনো সমস্যা নেই। তবে এভাবে ডাকা মোটেও উচিত নয়। কারণ, মায়ের মর্যাদা এক রকম। আর বিবির মর্যাদা আরেক রকম। তাই বিবিকে মা বলে ডাকা মাকরুহ। তবে যদি এই কথা বলে তালাক দেয়া উদ্দেশ্য থাকে অর্থাৎ এ কথা বুঝাতে চায় যে, আমার মা যেমন আমার জন্য হারাম, তুমিও আমার জন্য হারাম, তাহলে তালাক হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ৩-৪৭০)

স্ত্রীকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করলে কী হয় :

স্ত্রীকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করা ইসলামে নিষেধ। এ ধরনের অপ্রীতিকর কথার জন্য কঠিন শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে। নিজের স্ত্রীকে স্থায়ী হারাম (যেমন মা) নারীর অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করাকে জিহার বলে। এই জিহার প্রথা পরিত্যাগ করে বলা হয় যে যারা এটা করবেন, তাদের এ জন্য কাফফারা দিতে হবে।

একবার আউস ইবনে সামেত (রা.) ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মতো।’ অর্থাৎ স্ত্রীকে তিনি মায়ের মতো হারাম করেছেন। তখন নবী করিম (সা.) বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে এখনো কোনো বিধান অবতীর্ণ হয়নি। আমি কী বলব?’ এর কিছুক্ষণ পরই কিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়ে প্রাক্‌-ইসলামি জিহার প্রথাকে রদ করে দিল। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বহাল রইল।

স্ত্রীকে মা বলে ফেললে স্বামীর করণীয় কী :

সুরা মুজাদালাহর প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবীজিকে উদ্দেশ্য করে বলেন- قَدۡ سَمِعَ اللّٰهُ قَوۡلَ الَّتِیۡ تُجَادِلُکَ فِیۡ زَوۡجِهَا وَ تَشۡتَکِیۡۤ اِلَی اللّٰهِ ٭ۖ وَ اللّٰهُ یَسۡمَعُ تَحَاوُرَکُمَا ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَمِیۡعٌۢ بَصِیۡرٌ

আল্লাহ তার কথা শুনেছেন যে নারী (খাওলাহ বিনত সালাবাহ) তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছে, আল্লাহ তোমাদের দুজনের কথা শুনছেন, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা মুজাদালাহ: আয়াত ১)

See also  যেসব আমলে মহানবী (সা.)-এর দোয়া পাওয়া যায়

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মা নয়। তাদের মা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ২)

ইসলামপূর্ব সময়ে জিহারকে তালাকের একটি ধরন বলে গণ্য করা হতো। জিহার করলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক চিরতরে শেষ হয়ে যেত। সাহাবি আউস ইবনে সামেত (রা.)-এর স্ত্রী খাওলা (রা.)-এর আর্তিকে কেন্দ্র করে শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান দিয়ে সুরা মুজাদালার শুরুর আয়াতগুলো নাজিল হয়।