বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন: ক্ষোভের মুখে বুদ্ধিজীবী ও সরকারের ভূমিকা

বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের মাঝে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ দেখা দিয়েছে, যা দেশের বুদ্ধিজীবী ও সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।  ছাত্রদের আন্দোলনের পটভূমি, এর ন্যায্যতা এবং বুদ্ধিজীবী ও সরকারের করণীয় নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

কোটা আন্দোলনের পটভূমি

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রথা, যার উদ্দেশ্য ছিল সমাজের পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত করা। বর্তমানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মোট ৫৬% কোটা প্রথা বিদ্যমান, যার মধ্যে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা, ১০% নারী, ১০% জেলা এবং ৫% ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী কোটা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ছাত্রদের দাবি হলো এই কোটাগুলি পূর্ণাঙ্গ মেধার ভিত্তিতে পরিবর্তন করা।

ছাত্রদের দাবি ও এর ন্যায্যতা

ছাত্রদের দাবি হলো কোটার পরিমাণ হ্রাস করে তা ১০% এ নামিয়ে আনা এবং বাকি ৯০% মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা। এই দাবির পেছনে তাদের যুক্তি হলো:

  • যোগ্যতা ও মেধার মূল্যায়ন: বর্তমান কোটাব্যবস্থা মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে, কারণ তারা কোটা না থাকার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছে না।
  • প্রশাসনিক দক্ষতা: মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিলে প্রশাসনে দক্ষতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
  • সমান সুযোগ: মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিলে সমাজের সকল অংশের মানুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা

দেশের বুদ্ধিজীবীরা এই সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাদের করণীয়:

  • সচেতনতা বৃদ্ধি: বুদ্ধিজীবীরা সমাজে সচেতনতা বাড়াতে পারেন এবং আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারেন।
  • সংলাপের উদ্যোগ: বুদ্ধিজীবীরা ছাত্রদের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিতে পারেন এবং তাদের দাবির যৌক্তিকতা এবং তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
  • গবেষণা ও পরামর্শ: বুদ্ধিজীবীরা গবেষণা ও পরামর্শমূলক কাজ করতে পারেন যা সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে।
See also  আপিল বিভাগের রায়ের আগে সরকার কোটা নিয়ে কিছু করবে না: কাদের

সরকারের করণীয়

সরকারের কাছে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:

  • সংলাপ ও আলোচনা: সরকারের উচিত ছাত্রদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে তাদের দাবি ও সমস্যা শুনে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া।
  • কোটার পুনর্বিবেচনা: সরকারের উচিত বর্তমান কোটাব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করা এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু ও সমতাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা।
  • সুপরিকল্পিত বাস্তবায়ন: সরকারের উচিত একটি সুপরিকল্পিত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা যা কোটাব্যবস্থা পরিবর্তন করলে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর হয়।

বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন ছাত্রদের মধ্যে এক গভীর ক্ষোভের প্রতিফলন। তাদের দাবি যৌক্তিক ও ন্যায্য হলেও তা বাস্তবায়ন করতে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বুদ্ধিজীবী ও সরকারের মধ্যে কার্যকর সংলাপ এবং সমন্বিত উদ্যোগই এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে। দেশের উন্নয়ন ও সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য একটি সমতাভিত্তিক ও মেধাবান সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি, যা সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে।