রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে প্রিয় কন্যা ফাতেমা (রা.)-এর সন্তান হজরত হাসান ও হোসাইন (রা.)। তাদের বাবা হলেন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাতো ভাই ও ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)।
চতুর্থ হিজরির ৩ শাবান মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন হজরত হোসাইন (রা.)। তিনি ছিলেন ভাই বোনদের মধ্যে দ্বিতীয়। জন্মের পর নাবিজি (সা.) তার কানে আজান দেন, সপ্তম দিনে আকিকা করেন এবং মাথার চুল পরিমাণ রুপা সদকা করেন।
হজরত আলী (রা.) ও ফাতেমার (রা.) পরিবার ছিল নবীজির (সা.) নিজের পরিবারের মতোই। তিনি সব সময় তাদেরকে নিজের পরিবার গণ্য করতেন। ওমর ইবনে আবি সালামা (রা.) বলেন, উম্মে সালামার (রা.) ঘরে নবিজির (সা.) ওপর এ আয়াত নাজিল হয়,
إنمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
হে নবীর পরিবার, আল্লাহ তাআলা তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সুরা আহযাব ৩৩)
সে সময় নবীজি (সা.) ফাতেমা, হাসান ও হোসাইনকে (রা.)-কে ডাকেন এবং তাদের একখানা চাদরে আবৃত করেন। আলী (রা.) তার পেছনে ছিলেন। তিনি তাকেও চাদরে ঢেকে নেন, তারপর বলেন,
হে আল্লাহ, এরাই আমার পরিবার। আপনি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দিন এবং তাদের উত্তমরূপে পবিত্র করুন। (তিরমিজি ৩৭৮৭)
আল্লাহর রসুল (সা.) তার দুই নাতি হাসান ও হোসাইনকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাদের বুকে ঝড়িয়ে ধরতেন, চুমু খেতেন। নবীজি (সা.) বলতেন,
যে হাসান হোসাইনকে ভালোবাসে, সে আমাকেও ভালোবাসে, যে তাদের অপছন্দ করে, সে আমাকেও অপছন্দ করে। (ইবনে মাজাহ ১৩৪)
যারা হাসান-হোসাইনকে ভালোবাসে, নবীজি (সা.) তাদের জন্য দোয়া করেছেন। ওসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, এক রাতে কোনো প্রয়োজনে আমি নবীজির (সা.) কাছে উপস্থিত হলাম। নবীজি (সা.) বের হলেন। তিনি তার পেছনে কিছু আড়াল করে রেখেছিলেন। আমার প্রয়োজন শেষ হলে আমি তাকে বললাম, আপনার পেছনে কী আড়াল করে রেখেছেন? তিনি আড়াল সরালে দেখলাম তারা হাসান ও হোসাইন। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
এ দুজন আমার সন্তান, আমার নাতি। হে আল্লাহ, আমি এদের ভালোবাসি, আপনিও এদের ভালোবাসুন এবং তাকে ভালোবাসুন, যে এদের ভালোবাসে। ( তিরমিজি ৩৭৬৯)
জান্নাতি যুবকদের সর্দার হাসান-হোসাইন (রা.) :
হাসাইন-হোসাইনকে জান্নাতি যুবকদের সর্দার ঘোষণা করে নবীজি (সা.) বলেছেন,
( الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ ) হাসান ও হোসাইন জান্নাতি যুবকদের সর্দার। (তিরমিজি ৩৭৬৮)
হজরত হোসাইন (রা.) শহীদ হবেন এটা নবীজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। জিবরাইল (আ.) নবীজিকে (সা.) কারবালার মাটি দেখিয়েছিলেন এবং জানিয়েছিলেন এখানে তাকে শহিদ করা হবে। (তাবরানি)
আল্লাহর রসুলের (সা.) ওফাতের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর আশুরার দিন কারবালার প্রান্তরে হজরত হোসাইন (রা.) অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেন।