মোঃ ফারদিন হাসান দিপ্তঃ ১৯ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আমার ছেলে ইমন মিয়ার (১৯) ফোন থেকে আমার ফোনে কল আসে কে বা কারা তা জানান নি বলতে থাকে ইমন কি আপনার ছেলে,আমি হা বলার পর বলতে থাকে ইমন পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে আছে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি পথে পথে অনেক বাধা পেড়িয়ে ছেলের কাছে গেলেও তাকে আর জীবিত দেখতে পেলাম না। পুলিশের গুলিতে তার বুকটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে লাশটা পড়ে রয়েছে হাসপাতালে। কাদঁতে কাদঁতে কথাগুলো বলছিলেন শিক্ষার্থী ইমনের বাবা কৃষক কাউছার মিয়া।
কোটা আন্দোলন ঘিরে চলা সহিংসতার মধ্যে নরসিংদীর ভেলানগরে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রান হারায় ইমন । নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের দড়িচর গ্রামের কৃষক মোঃ কাউছার মিয়ার ছেলে মোঃ ইমন মিয়া নরসিংদী আইডিয়াল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ছেলের মৃত্যুর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও আজ সরেজমিনে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ইমনের মা মর্জিনা বেগম এখনও ছেলের ছবি দেখে কাদছে। তার স্বজনা জানায়, তার মা কোন সান্তনাই মানছেন না। ছেলেকে হারানোর শোকে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি। কান্না এখনও থামেনি। ইমনের মা মর্জিনা বেগম কান্নাজরিত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে কোন দিন কোন মিটিং মিছিলে যায় না, সে সেদিন তার মাকে মাঠে খেলতে যায় বলে বাড়ি থেকে বের হয়, আর বাড়ি ফিরে লাশ হয়ে।
ইমন দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। বড় ভাই কিছু দিন পূর্বে সৌদী গেছে চাকুরি করতে আর বড় বোন বাড়ির পাশেই বিয়ে হয়েছে।
তার বোন ইয়াছমিন বলেন, আন্দোলন আমার ভাইকে কেড়ে নিল। কোন মতেই ভাই হারানোর শোক সইতে পারছি না।
ইমনের চাচা আল-আমীন বলেন, ঘটনার দিন খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে সন্ধার আগে ভাতিজার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসি। পুলিশের গুলিতে ভাতিজার বুকটা এমনিই হয়ে ছিল তা বলতে পারবো না। তাই ভাতিজাকে আবার পোস্ট মডেম করতে নিয়ে কাটা ছেড়া করবে, ভাতিজার আরও কস্ট হবে, এই ভেবে আর পোস্ট মডেম করতে দেইনি। রাত ১০ টায় ভাতিজা ইমনের জানাষা শেষে গজারিয়ার দড়িচর কবরস্থানে দাফন করি।
দড়িচর গ্রামের লোকজন জানায়, শিক্ষার্থী ইমন ভালো ছেলে ছিল। এ এলাকায় পরিবারটি খুবই হতদরিদ্র। সামান্য ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই পরিবারটির। তাই মাথা গোজাাঁর মতো একটা ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।