চন্দ্রপাড়ের দেওয়ান সাহেব ও নুর সাহেব নামে দুই বৃদ্ধার বাড়ির চারপাশে—পুকুরপাড়ে—পুরো সম্পত্তিজুড়েই আম জাম কাঁঠাল বড়ই পেয়ারা তেঁতুল কামরাঙা প্রভৃতি ফলগাছের ছড়াছড়ি ছিল। অঢেল অর্থ সম্পত্তির মালিক ছিলেন তারা। দেওয়ান সাহেবের চেয়ে নুর সাহেবের একটু বেশিই ছিল বলা যায়।
এলাকার ছেলেপেলেরা নুর সাহেবের রক্ষীর সম্মতি বুঝে—মাঝেমধ্যে, গাছ থেকে ফল পেড়ে খেতো—কখনও আবার ঢিল ছুঁড়ে।
গাছের মালিক নুর সাহেব তাদেরকে দেখতে পেলেই দৌড়াতে-দৌড়াতে বকাবকি করতেন—ধরতে পারলে লাঠিপেটা করতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না। প্রয়োজনে চোর অপবাদ দিতেন—শালিস করতেন।
ছেলেমেয়েরা নুর সাহেবের বাড়িঘরে ঠিল ছুঁড়তো। টিনের চালে খুব শব্দ হতো—যতোটা হলে কেউ আর ঘরে থাকতে পারেনা। নুর সাহেবও আর ঘরে থাকতে পারতেন না। দিনরাত সে ঘুমাতে পারতেন না।
নুর সাহেব একরাতে কয়েকজনকে আটক করে ঘরে বন্দি করে রাখলেন। অভিভাবক আসলেও ছাড়লেন না। তখন এলাকার ছেলেমেয়েরা প্রতিবাদ গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে গ্রামের সব শ্রেণীর মানুষ ছেলেমেয়েদের সাথে একমত পোষণ করতে থাকেন। তোপের মুখে পড়ে নুর সাহেব আটককৃতদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
পুলাপাইন যে কী পুংটা সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন নুর সাহেব। পুলাপাইন রাঙ্গাইলে অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে পারে। গল্পটি ঠিক এমনই।
নুর সাহেবের জিম্মিখানা থেকে বের হবার পর ইনসান নামের এক তরুণ তর্জনীর আঙুল উঁচিয়ে বলেন:-
“বুড়া বেডা—তুমি আনদাজ পাইছো না,
এতোদিন ফল খাইসি—এবার ফল গাছ উপড়ে খাব;
পুলাপাইন যে কী সেটা তুমি কবরে যেও ভুলতে পারবে না।”
নুর সাহেব তার বাড়িঘরের ক্ষমতা ছেড়ে এমনকি নিজ দুনিয়া থেকেও প্রয়াত হয়েছেন। খালেক দেওয়ান সাহেবও একই পথে কবরে শুয়ে আছেন।
শুধুই, বর্বরোচিত আচরণের দুঃস্মৃতি মুছে যায়নি।
তবে, তারুণ্যের শক্তি আজও অমলিন যা কখনও মলিন করা যায়নি—যাবেও না।
তারুণ্য আমাদের বিবেক। মানুষ যেখানে—সেখানে বিবেকের শক্তিই সব’চে বেশি মূল্যবান সম্পদ।
বসতভিটা গাছপালা ফল- ফসলাদি কিংবা কোনো কৃত্রিম স্থাপনা মূখ্য নয়।
তারণ্য আমাদের গর্ব—অহংকার
অতীত—বর্তমান ও আগামীর ভবিষ্যৎ।
তারুণ্যই আমাদের একদিন মহাকালের মহাশক্তিমানের কাছে ইনসান হিসেবে মর্যাদা দিবে।