বাজারে সবজির দাম কমেছে

বাজারে সবজির দাম আরও কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদনস্থলেও কম দামে কাঁচামাল বিক্রি হচ্ছে। আবার পণ্য পরিবহনে গত কয়েক দিনে ব্যবসায়ীদের কোনো চাঁদা দিতে হচ্ছে না। এসব কারণে সবজির দাম কমেছে।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৫০ টাকার আশপাশে। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও যা ছিল ১০০ টাকার কাছাকাছি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কাঁঠালবাগান ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বিভিন্ন সবজি পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। আর লাউ, কাঁকরোল, করলা, বেগুন ও বরবটি কেনা যাচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে প্রায় এক মাস যাবৎ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে। সাম্প্রতিক সহিংসতার মধ্যে কাঁচা মরিচের কেজি উঠেছিল ৩৫০ টাকার ওপরে। তবে গতকাল বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায়।

আগের সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা করে কমেছে। গতকাল ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম ১৪৫ টাকা দরে কিনেছেন ক্রেতারা।

অবশ্য আলু, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম আগের মতোই রয়েছে। প্রতি কেজি আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা, আদা (চায়না) ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা ও রসুন (আমদানি) ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত মাসে চালের দাম কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা করে বেড়েছিল। সেই দাম এখনো কমেনি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

See also  বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, পদত্যাগ করেননি গভর্নর

রাজধানীর কাঁঠালবাগান বাজারে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মল্লিক আবেদ আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম তো সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এত দিন দাম বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হতো। এখন শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। আশা করছি, দাম কমে আসবে।

সবজির দাম কমার কারণ :  সবজির পাইকারি বিক্রেতা ও আড়তদারেরা জানান, সবজির বিভিন্ন উৎপাদনস্থল থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকার বাজারে আসার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকবার চাঁদা দিতে হয়। এসব চাঁদা নিতেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য ও সরকারদলীয় নেতা–কর্মীরা। যেমন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের এক আড়তদার নাম প্রকাশ না করে বলেন, এই বাজারে পণ্যবাহী ট্রাকপ্রতি অন্তত ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। তবে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার সাংবাদিককে  বলেন, রাস্তাঘাটে এখন চাঁদাবাজি নেই। তবে সহিংসতা ও ডাকাতির আশঙ্কায় পণ্য পরিবহনে রাজি হচ্ছেন না অনেক ট্রাকচালক। ফলে বিভিন্ন উৎপাদনস্থল বা মোকামে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। এটাও পণ্যের দাম কমার আরেকটি কারণ।

নতুন করে চাঁদাবাজির চেষ্টা  : রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতা–কর্মী ও পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে। তবে এই সুযোগে গত তিন দিনে নতুন করে চাঁদাবাজির চেষ্টা করেছে কিছু ব্যক্তি। এসব ব্যক্তি নিজেদের বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মী বলে ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচয় দিচ্ছেন। কেউ কেউ চাঁদার টাকা পাঠানোর জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বিকাশ নম্বরও দিয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করে কারওয়ান বাজারের একজন ফল বিক্রেতা সাংবাদিককে  বলেন, আগের যাঁরা চাঁদা নিতেন তাঁরা এখন আসছেন না। তবে বিএনপি পরিচয় দেওয়া কিছু ব্যক্তি চাঁদা চাইতে আসছেন। গত তিন দিনে তাঁরা পঞ্চাশবারের বেশি এখানে এসেছেন। এমনকি চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারিও করেছেন তাঁরা।

See also  বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, পদত্যাগ করেননি গভর্নর

এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল একদল শিক্ষার্থী চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করেছেন। পাশাপাশি তাঁরা হ্যান্ডমাইক দিয়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। তাঁদের একজন মো. আফফান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল করে কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে যে চাঁদাবাজি হয়, সেটি আটকাতে কাজ করছি। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদেরও চাঁদা না দেওয়ার বিষয়ে সচেতন করছি।’