প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর পদ হারালেন যারা

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি বোন শেখ রেহানাসহ দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যেই পদত্যাগ করছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত অনেক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া অনেককে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

 

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কারের পাশাপাশি শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি উঠে। এর প্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন বা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন অনেকে।

 

এ পর্যন্ত যারা পদ হারালেন:

 

প্রধান বিচারপতি: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে পদত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এর আগে শনিবার সকাল ১১টায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট চত্বরে জড়ো হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

 

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন।

 

আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি: প্রধান বিচারপতির পদ থেকে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের পর শনিবার (১০ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। শনিবার সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তাঁরা।

 

পদত্যাগকারী ৫ বিচারপতি হলেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেছেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার (৯ আগস্ট) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আবদুর রহমান খানের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর: বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (৭ আগস্ট) এই পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। ব্যাংকের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

See also  প্রায় কোটি টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩ যুবক আটক

 

অ্যাটর্নি জেনারেল: পদত্যাগ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল (রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা) এ এম আমিন উদ্দিন। বুধবার (৭ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ এম আমিন উদ্দিন পদত্যাগপত্রে পদত্যাগে কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত কারণ দেখান।

 

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল: বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পদত্যাগ করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে দেওয়া পদত্যাগপত্রে তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন। এর আগে আরেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরসেদ পদত্যাগ করেন।

 

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব : প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। বুধবার (৭ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পির সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

 

আইজিপি: পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চুক্তি বাতিল হয়। তাঁর স্থলে নিয়োগ পান ট্র্যাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট মো. ময়নুল ইসলাম। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। সাবেক আইজিপি আত্মগোপনে আছেন।

 

মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে। জিয়াউল আহসান র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গোয়েন্দা) হিসেবে বহুল পরিচিত ছিলেন। সে সময় তিনি কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য  জানানো হয়।

 

সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা চাকরিচ্যুতের আগ পর্যন্ত এনটিএমসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ফোনে আড়ি পাতা হয় বলে সরকারের এই সংস্থাটি বহুল পরিচিত।

 

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। ফাইল ছবি

বিএসইসির চেয়ারম্যান: শনিবার (১০ আগস্ট) মধ্যরাতে পদত্যাগ করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনিবার রাত ১১টার পর মো. আবদুর রহমান খানের কাছেই তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠান। শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন বলে জানান আবদুর রহমান খান।

See also  আবু সাঈদের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিলেন ড. ইউনূস

 

ইউজিসি চেয়ারম্যান: পদত্যাগ করেছেন দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। রোববার (১১ আগস্ট) সকালে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, পদত্যাগপত্রে তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছেন।

 

ঢাবি উপাচার্য: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া ৭টি হলের প্রভোস্টও তাদের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। শনিবার (১০ আগস্ট) পদত্যাগপত্র জমা দেন উপাচার্য এবং ৭টি হলের প্রভোস্ট। যেসব হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন সেগুলো হলো রোকেয়া, শামসুন নাহার, বিজয় একাত্তর, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযোদ্ধা জিয়া হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। এছাড়াও জহুরুল হক হলের চারজন আবাসিক শিক্ষকও পদত্যাগ করেছেন।

 

জাবি উপাচার্য: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন।

 

শাবিপ্রবি উপাচার্য: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। শনিবার (১০ আগস্ট) তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। জানা যায়, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে উপাচার্যের পদ ছেড়েছেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এর আগে শাবিপ্রবির সকল হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেন। বাকি যারা আছে তারাও পদত্যাগ করবেন বলে জানা যাচ্ছে।

 

এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) শাবিপ্রবির প্রক্টরিয়াল বডির সকল সদস্য, হলের প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট সকলে রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন।

 

বেরোবি উপাচার্য: বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হাসিবুর রশীদ। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতির সচিবের কাছে উপাচার্য তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী।

See also  দেশ ছাড়ার আগে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রী

 

রাবি উপাচার্য: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ ঊর্ধ্বতন ২৯ প্রশাসক ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) উপাচার্যসহ কর্মকর্তারা তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।

 

ইবি উপাচার্য: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা তিনজনই গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা যায়।

 

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক : বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। যিনি ২২ দিন আগে নিয়োগ পেয়েছিলেন। শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. সরকার আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

সালাম মুর্শেদি: বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানিয়েছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে বিবৃতিতে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

 

ব্রির মহাপরিচালক: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. শাহজাহান কবীর পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।