লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ নিয়ে টানা ১১ বার স্বাধীনতা দিবসের দিন লালকেল্লা থেকে ভাষণ দিলেন তিনি। মোদী বলেন, বড় সংস্কারে দায়বদ্ধ সরকার। তিনি বলেন, সাময়িক হাততালি কুড়ানোর জন্য কিংবা কোনো বাধ্যবাধকতার কারণে নয়, দেশকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই আমরা সংস্কারের কাজে দায়বদ্ধ।
এই ভাষণে বাংলাদেশের প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন মোদী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় হামলার সম্মুখীন হওয়া হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ১৪০ কোটি ভারতীয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবারের ওই ঘোষণায় বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের অগ্রগতির শুভাকাঙ্ক্ষী। আমরা আশা করি বাংলাদেশের পরিস্থিতি শিগগির স্বাভাবিক হবে। ভারতীয়রা চায় বাংলাদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। তিনি আরও বলেন, ভারত চায় তার প্রতিবেশী দেশগুলো সমৃদ্ধি ও শান্তির পথে হাঁটুক।
মোদী বলেন, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটেছে তা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা তাদের উদ্বেগের বিষয়টি বুঝতে পারি। আমি আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। সেখানে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এর আগে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান বিক্ষোভ-প্রতিবাদে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে নেই এমনটা বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তারপর থেকে তিনি এখন পর্যন্ত ভারতেই অবস্থান করছেন।
তবে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বেশ কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলা হয় যে, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুরা হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে। অনেক খবরের সত্যতা যাচাই করতে গিয়েই দেখা গেছে যে, এগুলো গুজব বা মিথ্যা তথ্য ছিল।
কিছু গণমাধ্যম আবার আগ বাড়িয়ে সম্ভাব্য উদ্বাস্তু সংকটের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। তারা বলছে, হিন্দুদের হয়তো বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। কিন্তু এ ধরনের দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কিছু আক্রমণ হয়েছে, বাড়িঘর জ্বালানো হয়েছে। কিন্তু তথ্য যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে মুসলমানদের বাড়িঘরও ভাঙচুর করা হয়েছে, জ্বালানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আক্রমণকারীদের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, সম্পত্তি। ধর্মীয় পরিচয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গৌণ ছিল, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্যই তারা হামলার শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের যেসব স্থানীয় নেতা-কর্মী পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন অথবা আসার চেষ্টা করছেন, তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে হিন্দু আর মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতেই হামলা হয়েছে।
.