স্বপ্ন ভাঙার শঙ্কায় চোখে গুলিবিদ্ধ নাহিদ

‘স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। আমার অন্তরে সুখ আছে, কিন্তু আমিতো চোখে দেখতে পারছি না।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফেনীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে এক চোখ হারানো ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. নাহিদুর রহমান আক্ষেপ করে সাংবাদিককে  এ কথাগুলো বলেন।

তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি, আমরা এই বাংলাদেশে বৈষম্য চাই না। এই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। আমার অন্তরে সুখ আছে কিন্তু চোখ দিয়ে সুন্দর দেশটাকে দেখতে পাচ্ছি না। আমার ভেতরের অনেক কষ্ট থেকে বলছি যে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। যেদিন আমি সুখ করবো, আনন্দ করবো ওইদিন আমাকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দৌড়াতে হয়েছে চট্টগ্রামের দিকে। আমার বাবা-মা-ছোট ভাই সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। এমন স্বৈরাচার আর কখনো চাই না। আমি চাই কোনো দেশে এমন স্বৈরাচার না আসুক।

তিনি জানান, ৪ আগস্ট শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এ সময় তিনি ফেনীর মহিপালে সার্কিট হাউজ রোডে অন্তত চারজনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। অসংখ্য আহত ছাত্রকে উদ্ধার করে হাসপাতালেও পাঠান তিনি। এরপর থেকে ফেনী ছিল নিস্তব্ধ। পরদিন ৫ তারিখ দুপুরে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে শুনে বিজয় মিছিল নিয়ে শহরের দিকে যায় ফেনীবাসী। মিছিলটি খেজুর চত্বরে গেলে লাভ মার্কেটের দিক থেকে হেলমেট পরা ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে সবার আগেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

এই শিক্ষার্থী বলেন, আমি মিছিলের সামনে ছিলাম। আমার হাতে একটি পতাকা ছিল। হঠাৎ করে হেলমেট পরা ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী গুলি চালানো শুরু করে। প্রথম গুলিটা আমার চোখে লাগে। আমি আর কিছু দেখছিলাম না। আমি চোখে হাত দিয়ে বসে পড়ি। তখন তারা আমার সারা গায়ে গুলি করে।

নাহিদ বলেন, আমি পরিবারের বড় ছেলে। আমার ওপর অনেক দায়িত্ব। এতদিন পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজও করতাম। এখন আমার চোখ ভালো হবে কি না ডাক্তাররা কিছুই বলতে পারছেন না। আমার স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করবো। কিন্তু আমি এক চোখ দিয়ে কিছু করতে পারবো কিনা জানি না।

See also  থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ সুধারাম থানার ওসিসহ ৭ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

নাহিদের বাবা মো. বাহার মিয়া একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। যেই বড় ছেলে পরিবারের হাল ধরবে ভেবে তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন সে এখন চোখ হারানোর শঙ্কায়। চিকিৎসা ব্যয় বহনের সাধ্যও নেই তার। এতে চরম হতাশায় দিন কাটছে নাহিদের বাবার।

তিনি বলেন, আমি ছোট চাকরি করি। আশা ছিল বড় ছেলে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু সে তো নিজেই আশঙ্কাজনক অবস্থায়। চোখটা যদি ভালো হয় তাহলে অন্তত সে কিছু একটা করে চলতে পারবে। এজন্য তাকে নিয়ে বড় হাসপাতালে এসেছি। দেখি আল্লাহ তার কপালে কী রেখেছে। যেকোনো মূল্যে নাহিদ তার চোখ ফিরে পাবে এটাই পরিবারের চাওয়া।

সূএ : জাগোনিউজ