চোখে-মুখে অপার বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক তরুণ। তাঁর চোখের সামনে হাজারো বালিহাঁস ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে। সেই দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে তিনি দেখছিলেন। কেবল ওই তরুণই নন, তাঁর মতো আরও জনা বিশেক লোক এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করছিলেন। এ দৃশ্য গত শনিবার সকালের। স্থান সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার চণ্ডীপুল এলাকা। দুই দিন ধরে ওই এলাকার একটি জলাশয়ে শীতের পাখিরা এসে অস্থায়ী আবাস তৈরি করেছে।
শনিবার সকালে সিলেট থেকে ঢাকা অভিমুখে মহাসড়ক ধরে যাওয়ার সময় বাঁ পাশে নগরের চণ্ডীপুল এলাকা লাগোয়া নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ-সংলগ্ন একটি জলাশয়ে দেখা গেছে, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা বালিহাঁসের ঝাঁক উড়ছে আকাশজুড়ে। হাজারো পাখি কিচিরমিচির রবে চারপাশ মুখর করে রেখেছে। জলাশয় তো রয়েছেই, এর বাইরে বাসাবাড়ির ছাদ থেকে শুরু করে উঠান—সবখানেই পাখিদের নির্বিঘ্নœ ওড়াউড়ি। খাবারের খোঁজে এসব পাখি জলাশয় ও পরিত্যক্ত জায়গায় বিচরণ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছয় বছর ধরে এই জায়গাটাকে অতিথি পাখিরা অস্থায়ী আবাস হিসেবে বেছে নিয়েছে। তীব্র শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতেই তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। বেশ কয়েক প্রজাতির পাখির মধ্যে হাঁস প্রজাতির আধিক্যই বেশি। শিকারিরা যেন পাখি শিকারে অপতৎপরতা না চালাতে পারে, সে জন্য স্থানীয় মানুষ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নজরে রাখছে।
পাশেই নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ। সেই কলেজের শিক্ষার্থী
ধ্রুবজিৎ বলেন, ‘দুই বছর ধরেই শীতের শুরুতে এসব পরিযায়ী পাখি এখানে আসছে। কিন্তু এবার ওদের দেরি দেখে একটু হতাশ হয়েছিলাম। দুই দিন আগে এসব পাখি দল বেঁধে এখানে আসে। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি আমরা কলেজের শিক্ষার্থীরাও উৎফুল্ল হয়েছি।’
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বললেন, জায়গাটি শহরের লাগোয়া হওয়ায় মুখে মুখেই পাখি আসার খবর জানাজানি হয়ে যায়। তবে পাখিরা জলাশয়টিকে অনিরাপদ ভাবতে শুরু করে এমন কিছুই করা উচিত হবে না।
বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, পরিযায়ী পাখি হত্যার দায়ে একজন অপরাধীকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। একইভাবে কোনো ব্যক্তি যদি পরিযায়ী পাখির মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করেন, দখলে রাখেন কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করেন বা পরিবহন করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার আইন প্রচলিত রয়েছে। সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘চণ্ডীপুল এলাকাটিকে পাখিদের অবস্থানের সময় নজরে রাখা হবে। শিকারিদের অপতৎপরতা দেখা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি অধিকার ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকারী সংগঠন প্রাধিকারের সভাপতি মঞ্জুর কাদের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেটের হাওরাঞ্চলে পাখি শিকারিদের তৎপরতা বেড়েছে। চণ্ডীপুল এলাকাটিকে নিরাপদ মনে করায় কয়েক বছর ধরে এখানে হাজারো পাখি আসছে। আমাদের নেতিবাচক আচরণে পাখিরা যেন স্থানটিকে কোনোভাবেই অনিরাপদ মনে না করে, সেটি আমাদেরই লক্ষ রাখা উচিত।’