লিটন হোসাইন জিহাদ: ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার গভীরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই অভ্যুত্থান মূলত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত, যা দেশের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে শুরু হয়েছিল। এই আন্দোলন পরে একটি সরকারবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়, যার কারণে সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।
ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি: ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে, যা “বাংলা ব্লকেড” নামে পরিচিত একটি কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীরা সরকারি বাধার সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দ্বারা হামলার ঘটনাও উল্লেখযোগ্য। ফলে আন্দোলন আরও উগ্র হয় এবং ছাত্র-জনতার অসন্তোষ নতুন মাত্রায় পৌঁছে যায়।
আস্থা সংকট: এই অভ্যুত্থান পুলিশ বাহিনীর উপর একটি বড় আস্থার সংকট তৈরি করেছে। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের আক্রমণ এবং দমনমূলক কার্যক্রমের কারণে পুলিশকে জনগণের চোখে একটি নির্যাতনকারী শক্তি হিসেবে দেখা শুরু হয়। এর ফলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা মারাত্মকভাবে কমে যায়। অনেকের মতে, পুলিশের এই ভূমিকা সরকারের প্রভাবাধীন হওয়ার প্রমাণ, যা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
পুলিশের আস্থা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ: এই পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীকে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, পুলিশের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণ বন্ধ করতে হবে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের হয়রানি যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, পুলিশ বাহিনীকে জনগণের সঙ্গে মেলবন্ধন স্থাপন করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা ও সেবায় পুলিশকে আরও নিবেদিত হতে হবে, যাতে তারা আবার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশের স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারে, যা আস্থার সংকট কাটাতে সহায়ক হতে পারে।
সামগ্রিক ভবিষ্যত: বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিবেচনা করলে, পুলিশের জন্য জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে যাবে। এটি সফল করতে হলে পুলিশের উচিত হবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা। দেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে পুলিশের এই আস্থা পুনরুদ্ধার কার্যক্রম একান্ত প্রয়োজন, না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
সার্বিকভাবে, পুলিশের পেশাদারিত্ব ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে না পারলে, ভবিষ্যতে তাদের আস্থা পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়বে।