ছয় ঘণ্টা পর বন্ধ হলো কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট

হ্রদে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছার কারণে আজ রোববার সকাল ৮টায় ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয় রাঙামাটির কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট। তবে ছয় ঘণ্টা পর বেলা দুইটার দিকে জলকপাটগুলো পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) এ টি এম আব্দুজ্জাহের জলকপাট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জলকপাট খোলা থাকা অবস্থায় প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নির্গত হয়েছে।

জলকপাট খুলে দেওয়ায় ভাটিতে অবস্থিত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা বন্যার আতঙ্কে ছিলেন। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব ভাটি অঞ্চলে পড়েনি বলে প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে আজ বেলা একটার দিকে  উপজেলার চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারের খ্রিস্টিয়ান হাসপাতাল-সংলগ্ন নদীঘাটে গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিকভাবে কর্ণফুলী নদীতে পানি চলাচল করছে। জলকপাট খুলে দেওয়ার পর নদীতে পানি বেড়েছে কি না, তা দেখতে এসেছেন উৎসুক লোকজন। নদী পাড়ের নির্মল বাতাস উপভোগ করতে দেখা যায় তাঁদের।

জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা আলম বলেন, ‘বাঁধের পানি ছেড়েছে, তা মনেই হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল করছে। বাঁধের পানি এভাবে অল্প অল্প করে ছাড়লে রাঙ্গুনিয়াসহ অন্যান্য নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।’

আরেক প্রবীণ বাসিন্দা শচীন্দ্র নাথ বলেন, ‘আমার বাড়ি নদীপাড়ে। একসময় কাপ্তাই বাঁধ ছাড়লে ঘরবাড়ি তলিয়ে যেত। এখন তো সে রকম কিছু হয়নি। আশা করি সামনের দিনেও তেমন কিছু হবে না।’

রাঙ্গুনিয়ার কৃষকদের আশঙ্কা ছিল বাঁধের পানি ছাড়লে উপজেলার শস্যভান্ডার গুমাইবিলে পানি আরও বেড়ে যাবে। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি দপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, গুমাইবিলে গতকাল শনিবার ৪ ফুটের মতো পানি ছিল। সেই তুলনায় এখন পানি আরও কমে গেছে। বাঁধ ছাড়ার কারণে গুমাইবিলে তেমন প্রভাব পড়েনি।

উত্তম কুমার আরও বলেন, ‘৫ দিন পর বিল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। এই বিলে ৭০ শতাংশ বন্যা সহনশীল জাতের চারা লাগানো হয়। ফলে চারা নষ্ট হয়নি।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন , ‘কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়ার প্রভাব উপজেলায় নেই বললেই চলে। তবু ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের লোকজন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।’

গতকাল শনিবার বিকেলে বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়ার খবরে তৎপর হয় স্থানীয় প্রশাসন। কর্ণফুলী নদী ও শাখাখালের তীরবর্তী এবং নিচু অঞ্চলে বসবাসরত মানুষকে সরে যেতে করা হয় মাইকিং। নদীতীরবর্তী অনেক বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। অনেকে সরিয়ে নেন ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানি ছিল ১০৭ দশমিক ৬৬ ফুট এমএসএল (মিন সি লেবেল), যা বিপৎসীমার কাছাকাছি। হ্রদের উজান ও ভাটি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাত ১০টার দিকে বাঁধের স্পিলওয়ের ১৬টি ফটক পানিনিষ্কাশনের জন্য ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়ার কথা ছিল। তবে এর পরিবর্তে আজ রোববার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ১৬টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়। পরে বেলা দুইটার দিকে বন্ধ করা হয় জলকপাট।

কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের বলেন, ‘বর্ষাকালে হ্রদে অতিরিক্ত পানি বাড়লে বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’