লিটন হোসাইন জিহাদ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া: শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিটি গলিপথে ছিল জীবনযাত্রার সজীবতা। কিন্তু আজ, এই শহরটিকে দেখে আর সেই পুরনো চেহারা খুঁজে পাওয়া যায় না। শিল্প ও সাহিত্যের এ শহরটি হয়ে উঠেছে এখন “হাসপাতালের নগরী” । যেন যানজটে গিলে খাওয়া এক বিশৃঙ্খল নগরীর প্রতিচ্ছবি ।
প্রতিদিনের রুটিনমাফিক জ্যামে আটকে থাকা মানুষগুলো যেন ক্লান্তি আর হতাশার ভেতর দিয়ে কাটায় তাদের দিন। শহরের প্রতিটি রাস্তা এক সময় ছিল মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের পথ, তা এখন হয়ে উঠেছে এক অন্তহীন অপেক্ষার নাম। কয়েক মিনিটের পথ এখন প্রায় এক ঘণ্টার দুঃস্বপ্ন।
শহরের রাস্তায় নিয়ন্ত্রণহীন অটো রিকশা ও সিএনজি চালিত যানবাহনগুলো নির্দ্বিধায় প্রবেশ করছে, যেন কোনো নিয়মের বালাই নেই। তাদের বেপরোয়া চলাফেরা মানুষকে প্রতিদিন বিপদের মুখোমুখি করছে, আর শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা যেন এক করুণ পরিহাসে পরিণত হয়েছে। যে পুলিশ একসময় এই শহরের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতো, তাদের প্রতি আজ মানুষের আস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে।
২৫ আগস্ট রবিবার সকল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত মেড্ডা থেকে টি এ রোড আশিক প্লাজা পর্যন্ত এক নিয়ন্ত্রীন যানজট ছিল। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে জনগণ পুলিশের প্রতি সেই বিশ্বাস হারিয়েছে, আর সেই সঙ্গে হারিয়েছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের শক্তি। মানুষ এখন পুলিশের প্রতি আগের মতো সম্মান দেখায় না, তাদের নিয়ম-নীতি মানতে চায় না। এই আস্থাহীনতা ট্রাফিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়েছে, আর শহরটির প্রতিদিনের জীবনযাত্রাকে করেছে বিষাদময়।
এই বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শহরে আসা রোগি, স্কুলগামী বাচ্চারা সহ বৃদ্ধ মানুষজন। প্রতিদিনের জীবনযাত্রা, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা সবকিছুই এই যানজটের কবলে পড়ে স্থবির হয়ে যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে যারা জীবন বাঁচানোর আশায় হাসপাতালের দিকে ছুটে, তাদের জন্য এই যানজট এক মূর্তিমান আতঙ্ক।
শহরটির এই করুণ পরিস্থিতি আমাদের সবার জন্য এক গভীর বেদনার কারণ। আমাদের প্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যেখানে একসময় মানুষের মধ্যে ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা, তা এখন যেন এক বেদনাদায়ক স্মৃতির প্রতিচ্ছবি হয়ে গেছে। এই শহরের গৌরবময় অতীত ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে—নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে যানবাহনের প্রবাহে, আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে, এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই শহরটি আমাদের সবার, আর এর পুনর্জাগরণ আমাদের হাতেই।