ছোটবেলায় মা বলেছিলেন স্কুলের হোমওয়ার্ক সারতে। সে কথা না শুনে কিশোর ছেলেটি মনোযোগ দিয়েছিল চিত্রনাট্য লেখায়। মা বলেছিলেন, চিত্রনাট্যে ভালো ক্যারিয়ার নেই। এ পেশায় আছে অনিশ্চয়তা। এমনকি লেখালেখির কাজকে ছোট করেও কথা বলেছিলেন। রাগে এই কিশোর মাকে বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে মা, আমি যখন বিখ্যাত লেখক হব, আমি সফল হলে তোমাকে এক কানাকড়িও দেব না।’ তারপরের গল্প যেন সিনেমার মতোই। নানা সংগ্রামে বেড়ে ওঠা এই পরিচালক আর কেউ নন, তিনি হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক এবং ১২০ মিলিয়ন ডলার এর মালিক কুয়েন্টিন টরেন্টিনো। পরিচালক হিসেবে তিনটি সিনেমা তাঁর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল। বলা যায়, সিনেমাগুলো তাঁকে পরিচালনার নানা কিছু শিখিয়েছিল। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সার্জিও লিওনের ‘দ্য গুড দ্য ব্যাড দ্য আগলি’। ওয়েস্টার্ন এই অ্যাডভেঞ্চার সিনেমা তাঁকে পরিচালনায় অনেক বেশি টেনেছে। দ্বিতীয়ত ‘ব্ল্যাক সাবাথ’। ১৯৬৩ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। একজন পরিচালকের যে স্বতন্ত্র কণ্ঠ থাকা দরকার, সেটাই তাঁকে এই সিনেমা শিখিয়েছে। আর তিন নম্বর সিনেমা তাঁকে শিখিয়েছিল, সিনেমার মধ্যে বিভিন্ন জনরা কীভাবে মিশিয়ে দারুণ গল্প বলা যায়। এ ছাড়া তাঁর প্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালকের তালিকায় রয়েছেন মার্টিন স্করসিস, জ্যঁ লুক গদার, হাওয়ার্ড হকর্স।তাঁর সিনেমার গল্পে শুরু থেকেই জায়গা পায় অপরাধী চরিত্রের নানা রকম ঘটনা। খুন, মাদকসহ নানা কিছু তাঁর সব সিনেমায় দেখা গেছে। চারপাশটা এভাবে তিনি বিভিন্ন সময় দেখেছেন। এভাবেই তাঁর গল্প বলতে ভালো লাগে।কুয়েন্টিন টরেন্টিনো’ সিনেমার ক্যারিয়ার শুরুর পর ভেবেছিলেন, ১০টি সিনেমার মধ্যেই সিনেমার ক্যারিয়ার শেষ করবেন। তিনি মনে করতেন, ১০টি সিনেমার মধ্যেই তাঁর গল্প বলা শেষ করা যায়। পরে সিনেমা নিয়ে বই, উপন্যাস লেখার দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ১০ নম্বর সিনেমার ঘোষণাও দিয়েছেন এ বিষয়ে তিনি খুবই কড়া। তাঁর শুটিং সেটে সব ধরনের মুঠোফোন ব্যবহার করা নিষেধ। তিনি সাক্ষাৎকারে এটাও জানিয়েছিলেন যে তিনি নিজেও মুঠোফোন থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেনকিশোর বয়স থেকেই দুরন্ত ছিলেন। পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাকরি খুঁজতেন। বিভিন্ন সময় বেশ কিছু চাকরিতে জড়িয়ে যান। যে কারণে বেশ কয়েকবার পড়াশোনা থেকে ড্রপ আউট হন তিনি। লেখাপড়া নিয়ে তাঁর আগ্রহ খুবই কম থাকত। তবে নিয়মিত সিনেমা দেখতেন হলে গিয়ে। এ কারণে তাঁর টাকার প্রয়োজন ছিল বেশি।মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্কদের থিয়েটারে প্রথম চাকরি নেন। মূলত বয়সের তথ্য মিথ্যা দিয়েই এই চাকরি নেন। কারণ, প্রাপ্তবয়স্ক না হলে এসব থিয়েটারে চাকরি পাওয়া যেত না। সিনেমা হলটি ছিল ক্যালিফোর্নিয়ায়।একবার প্রযোজক ডন মার্ফিকে একটি রেস্টুরেন্টের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দিয়েছিলেন। পরে তাঁকে লাথি ও ঘুষি মারেন। এ ঘটনায় তাঁকে ৫০ লাখ ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলার মুখোমুখি পড়তে হয়।৫৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের জুড়ি সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। পরে ৬৭তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবেরও তিনি জুড়ি সভাপতি হয়েছিলেন।রোমহর্ষক সব সিনেমার এই পরিচালক পরিচালনা করতেন খুন, অপরাধ নিয়ে নির্মিত সিনেমা। তবে তিনি দেখতে পছন্দ করতেন ‘দ্য থ্রি স্ট্রুজেস’–এর মতো কমেডি সিনেমা। এ ছাড়া জনপ্রিয় কম্পিউটার গেমস নিয়েও তাঁর সময় কাটে।টরান্টিনোর জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসি অঙ্গরাজ্যে, ১৯৬৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। শৈশব থেকেই তিনি সিনেমা দেখতে দেখতে, চিত্রনাট্য লেখার দিকে ঝোঁকেন। পরে পরিচালনা শুরু করেন। শেষ তিনি ‘ওয়ানস আপন ইন হলিউড’ সিনেমাটি বানিয়েছিলেন।
তো এই ছিল কুইন্টিন ট্যারেন্টিনা সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য যদি আপনাদের কাছে এই প্রতিবেদনটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাকে ফলো করতে ভুলবেন না