আওয়ামী সরকারের যত দূর্নীতি

আওয়ামী সরকারের যত দূর্নীতি

লিটন হোসাইন জিহাদ: ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া গত পনেরো বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামল, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, তবে একই সঙ্গে দুর্নীতির নানা অভিযোগও ওঠেছে, যা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। আওয়ামী সরকারের যত দূর্নীতি

আওয়ামী লীগ শাসনামলে দুর্নীতির রূপরেখা

১. ব্যক্তিগত ও দলীয় সুবিধাবাদ:

গত পনেরো বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ব্যক্তিগত সুবিধাবাদের অভিযোগ বহুবার সামনে এসেছে। বিশেষ করে দলের নেতৃবৃন্দ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ অপব্যবহার, এবং বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ব্যক্তিগত লাভের অভিযোগ উঠেছে।

২. কন্ট্রাক্ট ও টেন্ডার দুর্নীতি:

টেন্ডারবাজি ও কন্ট্রাক্ট প্রদানের ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব এবং আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ বহুবার শোনা গেছে। বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্প, যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প ইত্যাদিতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি, এবং দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবৈধভাবে লাভবান হয়েছেন।

৩. ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্নীতি:

ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে ঋণ কেলেঙ্কারি এবং বড় অঙ্কের ঋণ মওকুফের ঘটনা ঘটেছে, যা অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এসব দুর্নীতি দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এক গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে।

৪. প্রশাসনিক দুর্নীতি:

প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং দলীয় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও কম নয়। পুলিশ, আদালত, এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে দলীয় নিয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে সাধারণ জনগণের আস্থা অনেকাংশেই নষ্ট হয়েছে।

See also  বন্যায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু বলেন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা

৫. সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি:

গত পনেরো বছরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। দলীয় প্রভাবের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা এবং সমালোচনামূলক রিপোর্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগও উঠেছে। এর ফলে দুর্নীতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

৬. মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি:

বড় বড় মেগা প্রকল্প, যেমন পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেল প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ প্রচুর শোনা গেছে। যদিও সরকার এই প্রকল্পগুলোকে দেশের উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে তুলে ধরেছে, তবে সেগুলোর বাজেটের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এই দুর্নীতিগুলোর প্রভাব শুধু সরকারের ভাবমূর্তিতেই নয়, বরং দেশের অর্থনীতি, সামাজিক স্থিতিশীলতা, এবং জনসাধারণের ন্যায্য অধিকারেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। গত পনেরো বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামল অনেক উন্নয়নের সাক্ষী হলেও, দুর্নীতির এই গভীর ছায়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে পিছিয়ে দিয়েছে এবং একটি দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ সরকারের প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্রভাবে প্রকাশ করেছে।

তথ্য সূত্র: অনলাইন