কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে এখনও লোকালয়ে প্রবেশ করেছে পানি। ফলে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ কমছে না।
এ ছাড়া বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে এখনও ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে, তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি থেকে এখনও উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
সরকারি হিসেবে জেলার ১৪ উপজেলার ১০ লাখ ৬১ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৭২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এ ছাড়াও, কুমিল্লার ১৭ উপজেলার মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে অন্তত ৭টি উপজেলায়। অতি দুর্ভোগে দিন কাটছে তাদের।
বন্ধ হয়নি উজানের পানি, কুমিল্লায় বন্যার পানি কমছে ধীরগতিতে।আকস্মিক বন্যায় কুমিল্লার সিংহভাগ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার এক সপ্তাহ পরেও বন্ধ হয়নি ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানি। তবে আগের চেয়ে উজানের পানির প্রবাহ কিছুটা কমেছে। এ অবস্থায় গোমতীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বেলা ১২টায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো.ওয়ালিউজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহ কিছুটা কমলেও তা একেবারে বন্ধ হয়নি। গোমতীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
অপরদিকে গোমতীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও, বাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করা বন্ধ হয়নি।
বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলেও গোমতীর বাঁধ ভাঙা অংশ জেলার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙা সেই অংশ দিয়ে অবিরত পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে লোকালয়ের দিকে। এসব পানি বুড়িচংয়ের নিম্নাঞ্চল দিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলার দিকে গিয়ে সেসব এলাকাগুলোকে প্লাবিত করছে।
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বুড়িচং উপজেলার প্লাবিত এলাকাগুলোর বেশিরভাগ এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। খুবই ধীরগতিতে পানি কমার ফলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলেও তা খুবই অপ্রতুল।
এছাড়া নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলায়ও সামান্য কমেছে বন্যার পানি। এসব এলাকার বেশিরভাগই দুর্গম হওয়ায় পানি সাঁতরে ত্রাণ সরবরাহ করা স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলা জুড়ে ২ লাখ ৮ হাজার ১২৬টি পরিবারের ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪৪ জন মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। বেসরকারি হিসেবে তা ১২ থেকে ১৪ লাখ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, বন্যায় জেলায় ১ হাজার ৮০০ টন চাল ও ৪৫ লাখ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ টন চাল ও ৩৯ লাখ টাকা নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত আছে।