সন্ধ্যার আকাশ ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে। দু’জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, কথারা কোথাও গুটিয়ে আছে। যেন কথার প্রয়োজনই নেই, শুধু উপস্থিতি—একটা নীরবতার অদৃশ্য জাল বুনে চলেছে তাদের মধ্যে। কথারা যেন কোথাও হারিয়ে গেছে,এক অসীম শূন্যতায় —তৃপ্তি মেশানো বিষাদ
সাগর কন্ঠে এক ধরণের অতৃপ্তির সুর নিয়ে বললো, “সবই ছিল আমাদের শুধু একটা জিনিস বাদে”
নদী একটু থেমে বললো, “কী ছিল না?”
সাগর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, আমাদের মাঝে কখনো সর্ম্পক ছিল না
নদী একটা ম্লান হাসি হাসলো, “এত বছর পাশে রইলাম, অথচ সম্পর্কের রূপটাই গড়তে পারলাম না!”
সাগর বলল, “ছিলে, কিন্তু কখনোই তো সেই রূপ পেল না আমাদের মাঝে,” “যেমন সাগরের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেও সবাই সাগরের গভীরে ঝাঁপ দিতে পারে না।”
“তুমি কি পারোনি? নাকি তুমি কখনো তা চাওনি?” নদী জিজ্ঞেস করলো, তার কণ্ঠে এক ধরনের চ্যালেঞ্জের সুর।
সাগর স্বীকার করে বললো, চেষ্টা করেছি অনেক, “কিন্তু পুরোটা সাহস কখনোই জুটলো না। তাই কিছুই হয়নি।”
“তুমি কি বলতে চাইছো, আমি তোমার জন্য কিছুই করিনি, আমি ছিলাম সাগরের পাড়ে বসে থাকা এক দর্শক?” নদীর চোখে একটু ব্যঙ্গ ফুটে উঠলো।
“আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে দর্শকই তো, তবে তোমার ক্ষেত্রে ভোরের কুয়াশা হওয়ার চেষ্টাটুকু হয়তো করেছিলাম। কিন্তু যতবার কাছে যেতে গেছি, সে বেলা হয়ে গেছে—তখন আর কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি,” সাগর বললো।
নদী চুপ করে রইলো। তারপর বললো, “তুমি তো সন্দেহের ভেড়াজালে আটকে রেখেছো আমায়। আঁজলায় ভরে নিতে পারতে আমায়।”
“তুমি তো কখনো বৃষ্টি হলে না। শুধু জানলার বাইরে কেঁদে কেঁদে ঝরলে,” তুমি তো আমাকে ভালোই বাসতে পারোনি নদী, অনুভব করতে পারনি সাগরের গভীরতা।সাগরের কণ্ঠে এক ধরনের নরম হতাশা।
নদী একটু থেমে বললো,“তুমি চঞ্চলা, প্রবাহিত। তোমার গভীরতার খোঁজ আমি কোনোদিনই পাইনি,”
সাগর বললো, তুমি জনে শুনেই সব করেছে ,তাই আমার কাছে তুমি শুধু এক ধরনের রহস্যই থেকে গেলে নদী।”
“তা হতে পারে,” নদী স্বীকার করলো, “তবে তোমাকে নতজানু করে আমি জিততে চাইনি কখনোই। আর তুমিও যে জিততে চেয়েছো, তাও তো নয়।”
“তবুও, আমি জিতেছি নদী, কারণ তুমি আমাকে জিতিয়ে দিয়েছো, বিশ্বাস ভাঙ্গার সফলতা আমার আছে, আরো আছে চাপা কষ্টের পাহাড়, তুমি এভাবে আমাকে না ঠকালে জীবনেরর মানেটাই বুঝতে পারতাম না” সাগরের কণ্ঠে এক ধরনের তৃপ্তি মেশানো বিষাদ।
নদী বললো, ক্ষমা করো আমায়, সর্ম্পকহীন সর্ম্পকটায় হাপিয়ে উঠেছি আমি, নিজের মতো বাঁচতে চাই-
তারা দুজনেই চুপ করে থাকে, আর কিছু বলার থাকে না। সন্ধ্যার অন্ধকার আরও গাঢ় হয়, আর মোয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসে মাগরিবের আজানের আওয়াজ । সন্ধ্যার লালিমায় পড়ে থাকে একটা অসম্পূর্ণতার চিহ্ন, যেটা আর কোনোদিনই পূর্ণ হবে না। কখনোই না।