হযরত মুহাম্মদ (সা:)

চিরন্তন আলোর উৎস: হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর সত্তার মহাজাগতিক ব্যঞ্জনা

লিটন হোসাইন জিহাদ: হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মহিমা এমন এক অভূতপূর্ব স্তরে পৌঁছেছে, যা কেবল মানবতার ইতিহাসে নয়, বরং মহাজাগতিক দৃষ্টিতে অমর। তাঁর জীবন, শিক্ষা, এবং চরিত্র আমাদের জন্য এক চিরকালীন আদর্শ । রাসূল সা:  শ্রেষ্ঠত্ব, মানবিক গুণাবলি, এবং তাঁর সত্তার মহাজাগতিক প্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করবো, যা আমাদের উপলব্ধির পরিসরকে সম্প্রসারিত করতে সহায়তা করবে।

রাসুল (সা.)-এর স্তুতি করতে গেলে আমরা এমন এক মহাবিশ্বের কাছে পৌঁছে যাই, যেখানে সবকিছুই তাঁর মহিমার সামনে নতজানু। তিনি শুধু একটি বিশেষ জাতির নেতা ছিলেন না; তিনি সমগ্র মানবজাতি ও সমগ্র সৃষ্টি জগতের মুক্তিদাতা ও পথপ্রদর্শক ছিলেন। তাঁর অবস্থা এমন এক মহাজাগতিক সত্যের প্রতিফলন, যা সময় ও স্থানের সীমারেখা ভেদ করে চিরন্তন আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর প্রতি প্রশংসা করতে গেলে আমাদের ভাষা ও উপলব্ধি প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে মহাজাগতিক ব্যঞ্জনায় পরিণত হয়।

তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, রাসুল (সা.)-এর সত্তাকে বোঝার জন্য প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে যে তিনি মানবতার জন্য আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত। তিনি ছিলেন আল্লাহর নূরের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যিনি সমগ্র সৃষ্টিকে আলোকিত করেছেন। ইমাম আল-গাজ্জালি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুফি দার্শনিক, রাসুল (সা.)-কে আধ্যাত্মিক ও মহাজাগতিক আলোর উৎস হিসেবে দেখেছেন, যা মানুষের অন্তর্দৃষ্টি ও বোধের সীমা ছাপিয়ে যায়। তাঁর সত্তা একদিকে যেমন মানবিক গুণাবলির চূড়ান্ত প্রকাশ, তেমনি তিনি সেই আদর্শ মানুষ, যিনি মানবজীবনের সর্বোচ্চ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিখরে পৌঁছেছেন।

রাসূল সা: এর সিরাত বুঝতে হলে, রাসুল (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি দিককে মূল্যায়ন করতে হয়। তিনি ছিলেন একাধারে প্রেম, করুণা, ন্যায়পরায়ণতা, সাহস, ধৈর্য এবং বিনয়ের প্রতীক। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু মহান ব্যক্তি এসেছেন, কিন্তু রাসুল (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব এই যে, তাঁর জীবন একটি পূর্ণাঙ্গ রোল মডেল, যেখানে আমরা প্রতিটি পদে আল্লাহর প্রতি নিবেদিত ভালোবাসা এবং মানবতার প্রতি গভীর দায়িত্ববোধ দেখতে পাই। তাঁর নৈতিক শিক্ষা শুধু তাঁর সময়ের জন্য নয়, বরং তা চিরন্তন, প্রতিটি যুগের জন্য প্রযোজ্য।

আল-ইসলাহ তত্ত্ব অনুযায়ী, রাসুল (সা.)-এর পথ হচ্ছে সেই সরল পথ, যা মানবজীবনকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। তিনি এমন এক ‘ইনসান-ই-কামিল’—আদর্শ মানুষ—যিনি আল্লাহর প্রেমে পূর্ণতা লাভ করেছেন। সূফি দর্শনে তাঁর সত্তাকে ‘মহাজাগতিক পুরুষ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়, যিনি পুরো সৃষ্টি জগতের জন্য আদর্শ এবং আল্লাহর সৃষ্টির প্রতিফলন। রাসুল (সা.)-এর বাণী ও কর্মশক্তি যেন পৃথিবীর বুকে এক মহাকাব্যিক সূচনা, যার মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। রাসুল (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা কেবল তাঁর ব্যক্তিগত গুণাবলিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং হযরত মোহাম্মদ সা: এর শ্রেষ্টত্বর  মধ্যে আল্লাহর সেই নূরের প্রতিফলন পাওয়া যায়, যা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক নয়, বরং বাস্তব জগতের প্রতিটি কার্যকলাপ ও নৈতিক ব্যবস্থার মূলভিত্তি।

তাঁর জীবন ও শিক্ষা সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি মহাজাগতিক বার্তা। তাঁর জীবন, কর্ম, ও আদর্শ এক চিরকালীন প্রেরণা, যা মানবজাতির জন্য একটি সঠিক পথনির্দেশনা প্রদান করেছে। রাসুল (সা.)-এর মহিমা বোঝা, তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করা, এবং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করা আমাদের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করবে এবং মানবতার উন্নতির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করবে।

লেখক: সাংবাদিক