নির্দেশিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না ফার্মেসিগুলোর জীবনরক্ষাকারী ওষুধ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, টিকা, অয়েন্টমেন্ট, জেল, ফুড সাপ্লিমেন্ট, ডায়াগনোসিস কিট, ব্লাড প্রডাক্ট ও রি-এজেন্টের মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী।
অধিকাংশ ওষুধের প্যাকেটের গায়ে ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নির্দেশনা থাকলেও ফার্মেসিগুলোতে নির্দেশিত তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।
ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিতে কোল্ড চেইন মেইনটেইন করা অনেক জরুরি। এদিকে, অধিকাংশ ওষুধের প্যাকেটের গায়ে ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নির্দেশনা থাকলেও
ফার্মেসিগুলোতে নির্দেশিত তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।
বেশির ভাগ ফার্মেসির মধ্যে এসি (এয়ার কন্ডিশনার) নেই। তাই তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলেই কার্যকারিতা কমে যায়।
“তাপমাত্রা বাড়ার কারণে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হয়– এমন ওষুধ কার্যকারিতা হারাবে। এগুলো আবার মূল্যবান এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে অধিকাংশ জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ থাকছেনা, সে কারণে রেফ্রিজারেটরে রাখা ওষুধও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
যেকোন ওষুধ বাজারে আনার আগে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা ও ৭৫ শতাংশ হিউমিডিটি পর্যন্ত রেখে স্থিতিশীলতা পরীক্ষা (স্ট্যাবিলিটি স্টাডি) করা হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয়, এই তাপমাত্রায় ওষুধের স্ট্যাবিলিটি কি পরিমাণ নষ্ট হয়, তারপর মেয়াদ ঠিক করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, যখন ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ওষুধ রেখে গবেষণা করে। কিন্তু এখন হিটওয়েভের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি ১৫-২০ দিনের বেশি চললে প্রোডাক্টে দুই রকমের সমস্যা হবে। সিরাপের রং নষ্ট হয়ে যাবে, ক্যাপসুলের শেড নরম হয়ে যাবে এবং দীর্ঘস্থায়ী গরমের কারণে প্রোডাক্টের কার্যকারিতা কমে যাবে।”
ওষুধ কোম্পানিগুলো ফ্রিজিং কাভার্ড ভ্যানে করে ওষুধ ডেলিভারি দেয়, কিন্তু দোকানে যাওয়ার পর ফার্মেসির দায়িত্ব তা নিয়ন্ত্রণ করা। যদিও অধিকাংশ ফার্মেসি তা করেনা।
“মডেল ফার্মেসিতে এসি, রেফ্রিজারেটার থাকে, কিন্তু দেশে মডেল ফার্মেসি অনেক কম। ওষুধের দোকানগুলো তাপমাত্রা মেইনটেইন করছে কিনা তা মনিটরিং করার দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের।
ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। যে দোকানে ফ্যান, এসি, ফ্রিজ আছে– সেসব দোকান থেকে ওষুধ কিনতে হবে।
দেশে প্রায় দুই লাখের মত ফার্মেসি আছে এরমধ্যে মডেল ফার্মেসি আছে প্রায় ৮০০টি। সারাদেশে টিনশেড অনেক দোকানে ওষুধ বিক্রি করা হয়, যেগুলোতে এসি বা রেফ্রিজারেটর কিছুই নেই। স্বাভাবিক সময়ে সেসব দোকানের ওষুধের কোল্ড চেইন ঠিকমত মেইনটেইন করা হয় না, সেখানে হিটওয়েভের এই সময়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
“গরমে ওষুধের মেয়াদউত্তীর্ণ হওয়ার আগেই মেয়াদ নষ্ট হয়ে যায়। ফার্মেসিগুলোতে যেনো এসি রাখে। তা না হলে দোকানদারের অজান্তেই ওষুধের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে।”
“আমরা ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ওষুধ রাখতে হবে, কিন্তু সাধারণত ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ওষুধের স্টাবিলিটি স্টাডি করা হয়। তাই ২-৫ দিনের হিটওয়েভে তেমন কোনো সমস্যা হবেনা। বর্তমান হিটওয়েভে এখনও ওষুধের মান নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছেনা, কারণ বেশিরভাগ ফার্মেসিতে এসি, ফ্যান আছে। ফ্যান চালিয়ে রাখলেও টেমপারেচার কমে যায়।
হিমাঙ্কের নিচে তাপত্রামায় সংরক্ষণ জরুরি ওষুধও রাখা হচ্ছে সাধারণভাবে। একইভাবে জেলা-উপজেলার সরকারি হাসপাতালের মেডিসিন স্টোর রুম ছাড়াও ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে ওঠা ফার্মেসিগুলো ওষুধ সংরক্ষণে নিয়মের বালাই মানছে না। ক্যাটাগরি অনুযায়ী সনদধারী ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না।
জাতীয় ওষুধ নীতিতেও ওষুধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেটর থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দোকানের নিবন্ধন দেওয়ার বিধান নেই। তবে বাস্তবে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।
ওষুধের মোড়কে শীতল পরিবেশ,আলো-বাতাস ও সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণের জন্য লেখা থাকে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে কোনোখানেই সেটির শতভাগ অনুসরণ হয় না। মার্কেট থেকে ওষুধ নিয়ে সেটি কতটুকু ডিগ্রেডেশন হয়েছে, ডিগ্রেডেশন হওয়ার পর কোনো টক্সিক ম্যাটেরিয়ালে পরিণত হয়েছে কিনা, সেবনে শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিনা-কিছুই দেখা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, ফার্মেসি কাউন্সিল, ওষুধ মালিক সমিতি, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি মিলে মাঠপর্যায়ে ওষুধের সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসা উচিত।