লিটন হোসাইন জিহাদ: বাজারে ঢুকতেই মনে হলো যেনো যুদ্ধক্ষেত্রে পা রেখেছি! সবজিগুলোও এমন দাম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন তারা রাজ্যের মণিহার—টমেটো ২৮০ টাকা! এ কি রক্তিম মণির মূল্য? নাকি মরিচগুলো ৪০০ টাকায় আগুনের গোলা হয়ে উঠেছে? বাজারে ঢুকে বুঝলাম, এ এক অলিখিত দুনিয়া, যেখানে দাম আর শাকসবজি একসঙ্গে ষড়যন্ত্র করছে।
সাহস করে গাজরের দিকে হাত বাড়াতেই দোকানদার এমনভাবে তাকালেন, যেন এই গাজরগুলি হিমালয়ের চূড়ায় জন্মায়! ২২০ টাকার গাজর কি এখন পোষা খরগোশদের জন্যও আরামদায়ক থাকবে? ধনিয়া পাতার দাম শুনে তো মনে হলো, মশলা নয়, যেন রাজমুকুট কিনতে এসেছি—৫৫০ টাকা! মনে হলো, ধনিয়ার সাথে এবার চা-কফিও সারতে হবে।
ডিম কিনতে গিয়ে বুঝলাম, হালি ডিমের ৬০ টাকা দাম শুনে কেবল আমি নই, ডিমের মুরগিরাও হয়তো হা করে তাকিয়ে আছে। এক ডজন কিনতে চাইলে তো পকেটের শেষ পয়সাটুকুও নিয়ে যাবে! ভাবলাম, এই ডিমগুলো কি এমন কোনো মুরগির, যারা ইউরোপীয় রাজপ্রাসাদে বাস করে?
এক পিস লাউ ১০০ টাকা—লাউ কি এবার গানের সুরে না, ড্রাম বাজিয়ে বিক্রি হবে? মনে হলো, বাজারের লাউগুলো আরামের কোনো স্পা থেকে এসেছে।
৪০০ টাকার শিম! শিম খাওয়া বুঝি ধনীদের জন্য নতুন স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে উঠেছে। যাদের পেটে শিম, তারা যেন আর পাঁচজনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
করল্লা আর কুমড়া দুজনেই দার্শনিকদের মতো। করল্লা বলে, “আমার তিক্ততা নিয়েই বাঁচো”, আর কুমড়া বলে, “আমার মিষ্টি ভাবটা ধরতে শেখো।” কিন্তু তিক্ততা ১২০ টাকায় আর মিষ্টি ভাব ৭০ টাকায় পাওয়ার পরে পকেটের মিষ্টি ভাবটাই উধাও হয়ে গেল!
মনে হচ্ছে, বাজারে কাঁচা সবজি নয়, শিল্পকর্ম কিনতে এসেছি। পেঁপে ৪০ টাকায় কেনা মানে স্বাস্থ্য সচেতনতা নয়, আর্থিক পরাক্রমের প্রমাণ। আর আলু 60 টাকায় কিনে তো বোঝা যাচ্ছে, আলু এখন আর “গরিবের বন্ধু” নয়; সে নিজেই অভিজাত মহলে পা রেখেছে।
সবজিগুলোর এমন দাম শুনে মনে হলো, এই বাজারে জীবনযুদ্ধ চালাতে গেলে সাহিত্যের দার্শনিক মন নিয়ে আসতে হবে। আলু, শাক আর শিম নিয়ে গল্প নয়, মহাকাব্য লিখতে হবে। পকেটের অবস্থা দেখে হেসে বললাম, “সবজি খাওয়ার চেয়ে গল্পের চাষ করা ভালো—সেখানে অন্তত পয়সা লাগে না!”
বাজার এখন এক ধরনের রম্যকাব্য—দ্রব্যের দাম বাড়ুক, না হয় গল্পে হাসি থাকুক!