পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা এবং চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্তের প্রতিবাদে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছেন নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় সাড়ে ৬০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চেয়ারম্যানের অপসারণ ও মামলা প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দিয়েছে ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল থেকে তারা এই কর্মসূচি পালন করছে। এ সময় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এতে করে নেত্রকোণায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পল্লী বিদ্যুতের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে রয়েছেন নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুতের প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক।
দুপুর দেড়টা দিকে রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
‘বৈষম্য থেকে মুক্তিকামী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে’ আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সমিতির এজিএম (ও অ্যান্ড এম) আব্দুল হাকিম, মো. সালাহউদ্দিন, ডিজিএম মো. আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া ও এজিএম (ই অ্যান্ড সি) রাজন কুমার দাস স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক বা অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দু’দফা দাবি আদায়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন চলছে।
আন্দোলনের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেম তথা আরইবি সংস্কার সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখপূর্বক সংস্কারসহ অন্যান্য সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য গত ১ আগস্ট ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ইতিপূর্বে উক্ত কমিটির চারটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত এবং দফায় দফায় সভা অনুষ্ঠিত হলেও সরকারের সংস্কার উদ্যোগে আরইবি’র প্রত্যক্ষ অসহযোগিতার কারণে কমিটি চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়নি। সভায় অনুপস্থিত থাকা, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন না করা, পরবর্তীতে বিদ্যমান কাঠামো বহাল রাখার প্রস্তাব প্রদান, গোপনে আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণের মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত তারা।
নেত্রকোণায় কমপ্লিট শাটডাউনে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
এর আগে গণস্বাক্ষরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাবি উপস্থাপন, গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে গত মে মাসে পাঁচ দিন এবং জুলাই মাসে ১০ দিন কর্মবিরতি, আগস্টে লং মার্চ টু আরইবি, ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটামে গণছুটি ঘোষণার পর জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন তারা। পরে সারাদেশে একযোগে ডিসি অফিস ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিতকরণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
চলমান প্রেক্ষাপটে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে তারা বলেন, কয়েকজনকে গ্রেপ্তার এবং ১০ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। এ অবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি অহিংস আন্দোলনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে আরইবির পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে দেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে।
তাদের দাবি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রত্যক্ষ মদদের কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ, সমিতির কর্মকর্তাদের চাকরি অবসানের আদেশ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
অন্যথায় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণাপূর্বক দু’দফা দাবি আদায়ে ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাকা অভিমূখে লং মার্চ করতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। ১৪ কোটি মানুষের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে টেকসই, আধুনিক ও যুগোপযোগী বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ এবং শহর ও গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসনে দেশের সব স্তরের ছাত্র-জনতাসহ সর্বসাধারণের সুদৃষ্টিও কামনা করেছেন আন্দোলনকারীরা।
নেত্রকোণা অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের একটি দল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএমের সঙ্গে আলোচনা করে।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে আরইবি-পবিস (পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি) একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ সব চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে তারা আন্দোলন শুরু করে। ওই সময় তারা মে মাসে পাঁচ দিন এবং জুলাই মাসে ১০ দিন কর্মবিরতি পালন করেছিল।