বর্তমানে যেখানে ৭০ বছর বেঁচে থাকাই মুশকিল, সেখানে একটি উপজাতির মানুষদের ১৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচার নজির রয়েছে। শুধু তাই নয়, ৯০ বছরের একজন পুরুষ বাবা ও ৭০ বছরের একজন নারী অনায়াসে মা হওয়ার ক্ষমতা রাখে। ভাবছেন এও কি সম্ভব? অসম্ভব মনে হলেও পৃথিবীতে এমন এক অঞ্চল রয়েছে, যেখানে ঠিক এমনটিই ঘটছে।
পাকিস্তানের একেবারে উত্তরে অবস্থিত পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালতিস্তান। কারাকোরাম, পশ্চিম হিমালয়, পামির ও হিন্দকুশ পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা ছবির মত সুন্দর এই প্রদেশের উত্তরে আছে নয়নাভিরাম হুনজা উপত্যকা। আর এ উপত্যকাতেই বাস করে রহস্যময় হুনজা বা বুরশো নামের একটি জনগোষ্ঠী। যেখানে পুরো পাকিস্তানের মানুষের গড় আয়ু ৬৭, সেখানে হুনজাদের গড় আয়ু ১২০ বছর। শুধু তাই নয়, এখানকার নারীদের প্রজনন ক্ষমতাও চোখে পড়ার মতো।
হুনজাদের চিরযৌবন ধরে রাখার রহস্য লুকিয়ে আছে তাদের জীবন যাপনে। বিজ্ঞানীদের মতে, হুনজারা সবসময় প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকেন। তাদের খাদ্যতালিকায় থাকে প্রচুর পরিমাণে শুকনো অ্যাপ্রিকট, লেবু জাতীয় ফল, বাদাম, শিম, বার্লি ও ভুট্টার মতো শস্য। মাখন, পনির, ডিম ও দুধ তুলনায় কম খান তারা। এছাড়াও, তুমুরু নামে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এক প্রকার উদ্ভিদের পাতা ফুটিয়ে চায়ের মতো পান করেন হুনজারা।
হুনজারা প্রয়োজনীয় খাদ্য ও সবজি নিজেরাই উৎপাদন করেন। গবেষকরা মনে করেন, হুনজাদের দীর্ঘ জীবন আর নিরোগ থাকার পেছনে আছে দূষণমুক্ত বাতাস, হিমবাহ থেকে আসা প্রাকৃতিক মিনারেল ওয়াটার এবং সারাবছর হিমশীতল পানিতে গোসলের অভ্যাস।
৭০ বছর বয়সেও সন্তান জন্ম দেন যে জাতির নারীরা
এমনকি শীতকালে যখন হুনজা উপত্যকা বরফে ঢেকে যায়, তখনও হুনজারা গরম পানিতে গোসল করেন না। এছাড়া, হুনজারা খান কম, কিন্তু পরিশ্রম করেন বেশি।
কিছু গবেষক আবার বলছেন, হুনজারা নিরুত্তাপ ও উদ্বেগহীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তাই তারা মানসিক চাপের সঙ্গে যুক্ত অসুখবিসুখে ভোগেন না। তারা শিশুদের মতোই জীবনযাপন করেন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেন।
পাশাপাশি, উপত্যকায় বাস করা এই হুনজা সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়মিত শ্বাসক্রিয়ার ব্যায়াম করেন, যা তাদের চর্ম ও শরীরকে নানাভাবে উপকৃত করে। এসবই তাদের দীর্ঘায়ু ও চিরযৌবন ধরে রাখার রহস্য।
আরেকটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এত দুর্গম স্থানে বসবাস করেও হুনজায় শিক্ষার হার ৯০%। যেখানে শহরাঞ্চলের শিক্ষার হারও আরও অনেক কম!