
শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে একটি আধুনিক ও উন্নত জনপদে রূপান্তরিত করার আহ্বান । বৃহস্পতিবার শহরের একটি রেস্টুরেন্টে মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের বি-স্পেস প্রকল্পের উদ্যোগে ‘জননিরাপত্তা’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে এই বার্তা দেন জেলার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক নেতৃবৃন্দরা ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার বিভাগ) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্যমত এবং পারস্পরিক সহমর্মিতার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতার প্রয়োজনে আমাদের একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে।
আলোচনায় উঠে আসা সমস্যাগুলো
১. নারী নিরাপত্তার অভাব: বক্তারা উল্লেখ করেন, শহরের রাস্তাঘাট, বাস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীরা নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। জরিপ অনুযায়ী, ৬৫% নারী মনে করেন, পুলিশ তাঁদের সমস্যার যথাযথ সমাধান দিতে ব্যর্থ।
২. সাইবার অপরাধ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানি এবং অনলাইন প্রতারণার মতো ঘটনা জনজীবনের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।
৩. মব জাস্টিস: শিক্ষার্থীদের মধ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বক্তারা এ ধরনের প্রবণতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান এবং অপরাধীদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
৪. ধর্মীয় সম্প্রীতির অভাব: ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সাম্প্রদায়িক শান্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
৫. কিশোর অপরাধ ও মাদক: কিশোর গ্যাংয়ের কার্যকলাপ এবং মাদকের প্রসার শহরের নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করছে।
বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ
বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার বিভাগ) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোজাফফর হোসেন। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা।
সকলের শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান ও সহযোগিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে উঠবে আধুনিক জনপদ
অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দীপক চৌধুরী বাপ্পী, তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শামীমা বাছির স্মৃতি, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুমানুল ফেরদৌসি, জাতীয় পার্টির সদস্য আবু কাওছার খানসহ বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শহরের বিভিন্ন ইস্যুতে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মব জাস্টিস, সাইবার অপরাধ এবং নারী নিরাপত্তার অভাব জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এসব সমস্যার সমাধানে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, বৈঠকে বক্তারা একমত হন যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উন্নয়ন এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রশাসন, রাজনৈতিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই শহরটিকে একটি আধুনিক, নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ জনপদে রূপান্তরিত করা সম্ভব। বক্তারা আরও বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করতে এবং একটি উন্নত সমাজ গড়তে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।