প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার: যুব সমাজের ক্ষতি ও প্রতিকারের পথ

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন ডিজিটাল টুল আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি এর অসচেতন ও অবাধ ব্যবহার বিশেষ করে যুব সমাজের জন্য এক মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তি যে উপকার করে, সেই প্রযুক্তিই অজ্ঞান ও অযথা ব্যবহারে হয়ে উঠছে ধ্বংসের কারণ।
যুব সমাজের উপর প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব
১. আসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যহানি
ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব ও গেমিং-এর প্রতি অতিমাত্রায় আসক্তি তরুণদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা, একাকীত্ব, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়িয়ে তুলছে। এটি পড়ালেখা ও কাজের প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দেয়।
২. সময়ের অপচয়
প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করা, অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখা বা গেম খেলা সময়ের এক ভয়ংকর অপচয়। এটি তাদের উৎপাদনশীলতা নষ্ট করে দেয় এবং লক্ষ্যহীন করে তোলে।
৩. ভুয়া তথ্য ও গুজবের শিকার
তরুণরা যখন প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন নয়, তখন তারা সহজেই গুজব, মিথ্যা তথ্য বা চক্রান্তমূলক কনটেন্টে বিশ্বাস করে ফেলতে পারে। এটি সমাজে বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষ ছড়ায়।
৪. নৈতিক অবক্ষয় ও অপরাধপ্রবণতা
ইন্টারনেটে সহজলভ্য পর্নোগ্রাফি, সহিংসতা বা উগ্রবাদী কনটেন্ট তরুণদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় ঘটায়। কিছু যুবক সাইবার বুলিং, হ্যাকিং বা প্রতারণার মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে।
৫. শারীরিক ক্ষতি
ঘনঘন স্ক্রিন দেখা, অস্বাস্থ্যকর বসার ভঙ্গি, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া ও একটানা মোবাইল ব্যবহারের ফলে চোখের সমস্যা, মাথাব্যথা, ঘাড় ও মেরুদণ্ডের ব্যথা তৈরি হয়।
সমস্যার প্রতিকার ও সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পথ
✅ ডিজিটাল সাক্ষরতা ও প্রযুক্তি শিক্ষা
তরুণদের প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখাতে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ডিজিটাল লিটারেসি কোর্স চালু করা দরকার। কিভাবে গুগল থেকে তথ্য যাচাই করতে হয়, কোন অ্যাপে কতটা সময় ব্যয় করা নিরাপদ—এসব জানতে হবে।
✅ পরিবারের ভূমিকা
অভিভাবকরা যেন শুধুমাত্র বকাবকি না করে, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারে গাইড করেন। সময় নির্ধারণ, অনলাইন অ্যাক্টিভিটির উপর নজরদারি এবং অফলাইনে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোতে উৎসাহ দিতে হবে।
✅ সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স ও সময় নিয়ন্ত্রণ
ডিজিটাল ওয়েলবিং অ্যাপ, স্ক্রিন টাইম কন্ট্রোলার, নির্দিষ্ট সময় পর নোটিফিকেশন বন্ধ করার মতো অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
✅ সৃষ্টিশীল কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার
তরুণরা যেন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ভিডিও এডিটিং, কোডিং, ডিজাইন, লেখালেখি বা অনলাইন শেখার কাজে যুক্ত হয়। ইউটিউব বা ফেসবুকের কনজিউমার না হয়ে তারা যেন ক্রিয়েটর হয়।
✅ সাইবার সিকিউরিটি ও অনলাইন নিরাপত্তা শিক্ষা
ইন্টারনেটে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়, ব্যক্তিগত তথ্য কিভাবে গোপন রাখতে হয়—এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকারের উদ্যোগে ও বিভিন্ন এনজিও-র মাধ্যমে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন জরুরি।
প্রযুক্তি একটি নিরপেক্ষ মাধ্যম—এটি আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে আবার অভিশাপও। এর ব্যবহার নির্ভর করে ব্যবহারকারীর সচেতনতার উপর। যুব সমাজকে যদি সময়মতো প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানো যায়, তবে তারা হবে ভবিষ্যতের উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা এবং সমাজের অগ্রপথিক। তাই এখনই সময় — সতর্ক হই, সচেতন হই, প্রযুক্তিকে হোক প্রগতির হাতিয়ার।
Responses