একটি গরীব লাশের জবান বন্দী

একটি গরিব লাশের জবানবন্দি
লিটন হোসাইন জিহাদ
আমার নাম কেউ রাখেনি,
মাটি ডাকে “ওই গরিবটা” বলে—
কোনো ভোটার তালিকায় ছিলাম না,
তবু প্রতিটি নির্বাচনে মরে গেছি নির্ধারিতভাবে।
আমি সে লাশ,
যার মৃত্যুর আগে পোস্টমর্টেম হয়েছে।
পেটের ভেতর রাষ্ট্রের পতাকা ছিল,
আর খাদ্য তালিকায়—ধোঁয়া, ধোঁকা, দরকারি দুঃস্বপ্ন।
আমার শেষ নিশ্বাসে ছিল পচা চালের গন্ধ,
আর লোনের ফাঁদে বাঁধা বাবার আর্তনাদ।
আমি মরে গেছি—তবু লাশটাকে নড়িয়েছে পুলিশ,
কারণ আমার গায়ের রঙটা ভোটের পক্ষের ছিল না।
আমার চোখ থেকে স্বপ্ন খুঁড়ে নিয়েছে একদল এনজিও,
বলে দিয়েছে: “উন্নয়ন হচ্ছে—তোমার মৃতদেহই প্রমাণ।”
আমি তালি বাজাই না, আমার হাত দুটো বাঁধা,
যাতে নেতার গাড়ি আসলে শোক জানাতে পারি নিরবদেহে।
একটি রাষ্ট্রীয় সংবাদে আমার মৃত্যু ছাপা হয়নি,
কেননা আমি মরিনি ঢাকায়, মরেছি হাওরের প্রান্তে,
যেখানে লাশগুলোও জল খায়, আর আত্মারা ভাত চায়—
কিন্তু সরকারের বরাদ্দ ফ্রেমে শুধু মুখের হাসি আঁকা।
আমার কবরে আসে এক পাগল প্রতিবন্ধী,
সে বলে—“তুই আমার মতোই উন্নয়নসঙ্গী।”
তখন আকাশ হেঁকে ওঠে,
আর গুলির শব্দে মাটি আবার জেগে ওঠে বুকে।
আমি এখন রক্তের মধ্যে ইতিহাস,
বেঁচে থাকি কাফনের নিচে লেখা সংবাদে,
যেখানে শিরোনাম হয়—
“একটি গরিব লাশ, অচেনা মৃতুতে রাষ্ট্রকে বিব্রত করে।”
Responses