চল্লিশের পরও ‘তরুণী’ থাকতে চান? গড়ে তুলুন ৫ অভ্যাস

চল্লিশ পেরোলেই শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে—শুধু চোখে নয়, ত্বকে, উদ্যমে, এমনকি মেজাজেও। পুরুষদের মধ্যে ক্লান্তি ও উদ্যমহীনতা দেখা দেয়, আর মহিলাদেরও শুরু হয় নানা শারীরিক পরিবর্তন। এই বয়স থেকেই মুখে, চুলে ও শরীরের গঠনে বয়সের ছাপ স্পষ্ট হতে থাকে।
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন— “বয়স তো হবেই, তাহলে বয়স্ক দেখানোয় আপত্তি কোথায়?” উত্তর দু’ভাবে দেওয়া যায়। এক, যদি সত্যিই কেউ বয়স নিয়ে চিন্তা না করতেন, তবে চুলের রং বা অ্যান্টি-এজিং ক্রিম বিক্রি হত না! দুই, বয়স বাড়ারও একটা সৌন্দর্য আছে— ৪০-এ ৩০-এর মতো দেখানোর দরকার নেই, কিন্তু বয়সটাকে যেন সুস্থ, প্রাণবন্তভাবে ধরা যায়। ইংরেজিতে যাকে বলা হয়—Aging like fine wine!
কিন্তু কীভাবে বয়সের সঙ্গে সৌন্দর্য ও তারুণ্য বজায় রাখা যায়?যাপন প্রশিক্ষক লিউক কুটিনহো জানাচ্ছেন, প্রতিদিনের জীবনে মাত্র পাঁচটি অভ্যাস বদল আনলেই সম্ভব এই ‘ফাইন ওয়াইন’-এর মতো বয়স বাড়ানো। শুনতে সহজ, কিন্তু নিয়ম করে পালন করাটাই আসল চ্যালেঞ্জ।
১. ঘুম
লিউক বলছেন, ঘুমকে অবহেলা করবেন না। প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম বয়সের গতি অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে।ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. অর্পিতা বনসলও বলেছেন— ‘‘এক রাত ভালোভাবে না ঘুমোলে শরীর প্রি-ডায়াবেটিক অবস্থায় যেতে পারে, কারণ ইনসুলিন তখন ঠিকমতো কাজ করে না।ভালো ঘুম হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে, পেশিকে বিশ্রাম দেয় এবং ত্বককেও রাখে তরতাজা। তাছাড়া, ভালো ঘুম মানেই ভালো মেটাবলিজ়ম— যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২. খাবারদাবারে শৃঙ্খলা
৪০-এর পর শরীরে নানা পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়, তাই খাওয়ার রুটিনে সচেতন হওয়া জরুরি।
লিউকের পরামর্শ—খাবারে রাখুন লিন প্রোটিন (ডিমের সাদা অংশ, মুরগির বুকের মাংস, ছোট মাছ, সয়াবিন, দই, ছানা ইত্যাদি)। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন A, B, C, K এবং ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ নিন নিয়মিত।
প্রতিদিন অন্তত একবেলা ফল ও টাটকা শাকসবজি খান।রাতের খাবার দেরিতে নয়, আর সকালের নাশতা হোক পুষ্টিকর।এই অভ্যাস রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং শরীরকে রাখবে সক্রিয়।
৩. পানি পান
পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের প্রতিটি অঙ্গের জন্য জরুরি।লিউকের মতে, “দিন শুরু করুন এক গ্লাস (৩০০ মিলি) ঈষদুষ্ণ জল খেয়ে।”চেষ্টা করুন দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার জল খেতে, তবে রাতের আগে দুই লিটার শেষ করে ফেলুন, যাতে কিডনিতে চাপ না পড়ে।
৪. শরীরচর্চা
বয়স বাড়লে পেশির জোর কমে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট ব্যায়াম করুন।বিশেষ করে কোর মাসল (পেটের নীচের অংশ) শক্ত রাখার ব্যায়াম করুন।হাঁটা বা হালকা জগিংও দারুণ ফল দেয়— শরীরচর্চা শুধু শরীর নয়, মনকেও তরতাজা রাখে।
৫. প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো
শহুরে জীবনে আমরা বেশিরভাগ সময়ই ঘরের মধ্যে কাটাই। কিন্তু প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
লিউকের পরামর্শ—প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে সময় কাটান, সম্ভব হলে সকালে।খোলা বাতাসে হাঁটুন, ঘাসে খালি পায়ে হাঁটুন, গভীর শ্বাস নিন।মাত্র এক মাস এই রুটিন মেনে চললে শরীরের সঙ্গে মনও থাকবে সজীব, আর দেহঘড়ি ফিরবে সুস্থ ছন্দে।

Responses