ব্রাশ করেও যাচ্ছে না মুখের দুর্গন্ধ? হতে পারে মারাত্মক অসুখের লক্ষণ

মদ্যপান করেন না, ধূমপানও করেন না—তবুও মুখে কটু গন্ধ? এমন সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। সাধারণত দাঁতের মাড়ি বা পেটের সমস্যা থেকে মুখে দুর্গন্ধ হয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এই দুর্গন্ধ অনেক সময়ই লিভারের গুরুতর রোগের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় ‘ফেটর হেপাটিকাস’ (Fetor Hepaticus)।
সালফারের গন্ধই বিপদের ইঙ্গিত: বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন লিভার শরীরের দূষিত পদার্থগুলো ঠিকভাবে ছেঁকে ফেলতে পারে না, তখন সালফারসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রক্তে জমে যায়। পরে তা শ্বাসের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসে, এবং তখন মুখ থেকে পচা মাছ, রসুন বা ডিমের মতো গন্ধ পাওয়া যায়। এটাই ফেটর হেপাটিকাস।
চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক জানান, “লিভারের দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীর মধ্যেই এই লক্ষণ দেখা যায়। এমনকি যাঁদের তলে তলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তাঁরাও এই উপসর্গে ভুগতে পারেন।”
সতর্ক সংকেত: জন্ডিস থেকে ক্লান্তি :
এই অবস্থায় মুখের দুর্গন্ধের পাশাপাশি আরও কিছু উপসর্গ দেখা দেয়—
- ত্বকে ও চোখে জন্ডিসের মতো হলদে ভাব
- পেট ফেঁপে যাওয়া ও পেটে জল জমা
- পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া
- শরীরে কালশিটে দাগ পড়া
- ক্লান্তি ও অবসাদ বৃদ্ধি
গুরুতর অবস্থায় রোগীর কথাবার্তা অসংলগ্ন হয়ে যেতে পারে, স্মৃতিভ্রংশ বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যা দেখা দেয়— যা লিভারজনিত হেপাটিক এনসেফেলোপ্যাথির লক্ষণ।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
চিকিৎসকেরা বলছেন, ফেটর হেপাটিকাস ধরা পড়া মানে লিভারের রোগ জটিল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
সচেতনতার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—
- নিয়মিত লিভার ফাংশন টেস্ট করা
- মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে পরিহার
- ভাজাপোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা
- প্রতিদিন শরীরচর্চা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে লিভার সিরোসিস পর্যন্ত গড়াতে পারে, সে ক্ষেত্রে শেষ অবলম্বন লিভার প্রতিস্থাপন।

Responses