ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের সামনে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন— রবিবারের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

মো: মনির হোসেন : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের সামনে অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং একটি দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক স্থাপনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কলেজের প্রধান ফটকের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার-ফেস্টুন হাতে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। তারা “অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করো, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করো”, “দৃষ্টিনন্দন ফটক চাই, নিরাপদ কলেজ চাই”—এমন নানা স্লোগান দেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে কলেজের পক্ষে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ জেলার সর্ববৃহৎ নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে এই কলেজ নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কলেজের সামনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট, চা-স্টল ও অন্যান্য স্থাপনা শিক্ষার্থীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে।
তারা অভিযোগ করেন, “প্রতিদিন কলেজে আসা-যাওয়ার পথে আমাদের নানান হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক সময় অশোভন আচরণ, ইভটিজিংসহ অপ্রতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।” শিক্ষার্থীদের দাবি, জেলা সদর হাসপাতালের পাশে কলেজটি হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর মানুষের আনাগোনা হয়, যার সুযোগ নেয় কিছু অসাধু ব্যক্তি। কলেজের সামনে জমে থাকা ভিড়ের মধ্যেই ঘটে অশালীন আচরণ ও উত্যক্ততার ঘটনা। তাই দ্রুত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে কলেজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

তারা আরও বলেন, জেলা শহরের অন্যতম কেন্দ্রস্থলে থাকা সত্ত্বেও কলেজটির কোনো দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক নেই। ফলে সাধারণ মানুষ এমনকি যানবাহনের চালকরাও কলেজটির অবস্থান সহজে বুঝতে পারেন না। বর্তমানে যে ছোট পকেট গেটটি আছে, তা একদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ, অন্যদিকে পর্যাপ্তও নয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা চাই একটি সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন ও নিরাপদ প্রধান ফটক, যা আমাদের গর্বের প্রতীক হবে।”
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল হান্নান খন্দকার বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক। আমরা বিষয়টি ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ফটক নির্মাণের বিষয়ে উর্ধ্বতন দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হবে।”

অধ্যক্ষ আরও বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের সামনে একটি নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি যাতে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করতে পারে।”
মানববন্ধনে জান্নাতুল আরিফা, জান্নাতুল ফেরদৌস, ফারজানা আফরোজ প্রমি, মনসুরা আক্তার মেহজাবিন, ইহসানা ইফফাত রিতা, লুবনা নাহার তাসনিমসহ কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অভিভাবকেরাও একাত্মতা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কলেজের সামনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট শুধু জায়গা দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তারা ময়লা-আবর্জনা ফেলে পুরো পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। এতে দুর্গন্ধের কারণে সকাল-সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা দুঃসহ হয়ে উঠেছে।
বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, আগামী রোববারের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণের আশ্বাস না পেলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে নামবেন।
তারা বলেন, “আমরা প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাধান। কিন্তু যদি আমাদের দাবি অগ্রাহ্য করা হয়, তাহলে রোববার থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, “এই কলেজ শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারীদের আত্মনির্ভরতার প্রতীক। আমরা চাই আমাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও গর্বের এই শিক্ষালয় যেন অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত হয়।”

Responses