Spread the love

ঝরনা শুনতেই পাহাড় থেকে ঝিরিঝিরি পানি পড়ছে এমন দৃশ্যই চোখে ভাসে সবার! সঙ্গে পানির কলকল ধ্বনি। তবে কখনো শুনেছেন কি পানি নয় বরং আগুনের ঝর্ণা ধারা বয়ে চলেছে? অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই! আসলে প্রকৃতির আশ্চর্য সব সৌন্দর্য কখনো বা ব্যাখ্যাহীন। আগুন প্রপাত বা ফায়ারফলসই হলো তেমন এক প্রাকৃতিক নিদর্শন।

নিকষ কালো পাহাড়, তার উপর সাদা বরফের স্তর। গায়ে আগুনে লাল রঙের আভা, এ যেন স্বর্গীয় দৃশ্য। তবে এমন চমক শুধু দেখা যায় ফেব্রুয়ারি মাসেই। ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়সমাইট ভ্যালিতে গেলে দেখা যাবে চোখ জুড়ানো ফায়ারফলস। এমন বিরলতম অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে ক্যালিফোর্নিয়ায় ছুটে আসেন পর্যটকরা।

শীত থেকে শুরু করে বসন্তের প্রাক্কালে শুরু হয় ফায়ারফলস। সূর্যের আলোয় জলপ্রপাতের জলের রং হয়ে ওঠে উজ্জ্বল কমলা। দূর থেকে মনে হবে পাহাড়ের গাঁ বেয়ে আগ্নেয়গিরির একটি শাখা নেমে যাচ্ছে। মনে হবে পাহাড়ে লাভা যেন পাহাড়ের গাঁ বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা নেভাদায় এই জাতীয় উদ্যান। এটি অত্যন্ত শান্ত প্রাকৃতিক উদ্যান। সবুজ বড় বড় ফার্ণ, পাইন গাছে ভর্তি পার্কের মধ্যেই মাথা উঁচু করে রয়েছে পাহাড়। যেখানে শীতকালে, পাহাড়ের চূড়ায় বরফের স্তর পড়ে থাকে। শীত, বসন্তে পর্যটকদের প্রথম পছন্দ এই উপত্যকার হর্সটেল ফল। যা ফায়ারফল নামেও পরিচিত।

যদিও পুরো বিষয়টিই প্রাকৃতিক। তবে এর পিছনে রয়েছে একটি কাহিনী। ইয়সমাইটের বাসিন্দা মনে করতেন, ওই জলপ্রপাতের নিচে কেউ বনফায়ার করে আনন্দ করছে। প্রতিদিন রাত ৯টা নাগাদ টানা ১০দিন ধরে সেখানে আগুন জ্বেলে রাখে কেউ। তার জন্যই ওই ঝরনাটিও তেমনি আগুন-জলে পরিণত হয়।

এমনটা ভাবনার পর থেকে জলপ্রপাতের খুব কাছে গিয়ে আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকাটা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৬৮ সালের পর থেকে ওই জায়গায় মানুষের যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শত শত বছর ধরে এই উপত্যকায় বসবাসকারী আওয়াহিনীচি ইন্ডিয়ানরা সম্ভবত এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতেন!

তবে তারা কখনো এ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাননি কিংবা প্রচারও করেনি। ইয়োসেমাইট ভ্যালিটি সম্পর্কে ১৮৫১ সালে প্রথম জানা যায়। পরবর্তী দশকগুলোতে এর প্রাকৃতিক বিস্ময়কে প্রচুরভাবে প্রচার করা হলেও ফায়ারফলসের উল্লেখ নেই। এমনকি জন মুইর, যিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ইয়োসেমাইট উপত্যকায় বসবাস করতেন তিনিও কখনো হর্সটাইল ফলসে আগুনের কথা উল্লেখ করেননি।

https://www.facebook.com/watch?v=1423286071850055

১৯৭৩ সালে ফটোগ্রাফার গ্যালেন রওয়েল প্রাকৃতিক ইয়োসেমাইট ফায়ারফলের প্রথম ছবিটি তোলেন। রাউলের ছবিটি ফায়ারফলের খ্যাতি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। ডিজিটাল ফটোগ্রাফি এবং সোশ্যাল মিডিয়া আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত ফায়ারফল বিশ্বব্যাপী অজানাই ছিলো। ঝর্ণা স্বরূপ অগ্নি বেয়ে পড়ার নাটকীয় চিত্রগুলো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এই ফায়ারফলটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

এখন তো কয়েক’শ ফটোগ্রাফার এবং দর্শক এই আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক ঘটনাটি এক ঝলক দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকেন। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস, সাদা ও বরফ ঠান্ডা ঝরনা পাহাড়ের গাঁ বেয়ে ঝড়ে পড়ে। দূর থেকে দেখলে ঘোড়ার লেজই মনে হবে। ইআই ক্যাপ্টেন পিকের পূর্ব দিকে এই জলপ্রপাতকে ঘিরেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ফ্রেব্রুয়ারির শেষের দিকে।

সেই সময়টাই ফায়ারফল হওয়ার মোক্ষম সময়। ফোটোগ্রাফাররা ও প্রকৃতিপ্রেমীরা ওত পেতে থাকেন এই স্বর্গীয় দৃশ্যের জন্য। মাত্র ১০ দিন এই চোখ জুড়ানো লাল-কমলা রঙের জলপ্রপাত দেখা যায়।